আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় কমছে
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:৪৬
ঢাকা: তৃতীয় বারের মতো সংশোধন হচ্ছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প। এবার ব্যয় কমছে, তবে মেয়াদ বাড়ছে তিন বছর। এ সংক্রান্ত সংশোধনী প্রস্তাব মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় দাঁড়ায় ২ হাজার ২০৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় ফের বেড়ে ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ২০ লাখ টাকা হয়। এবার তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ১৪ কোটি ১১ লাখ টাকা কমিয়ে করা হচ্ছে ৪ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তারপর দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে তিন বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে কক্সবাজারের খুরুশকুল মৌজায় পুনর্বাসনের জন্য ১৩৯টি পাঁচতলা আবাসিক ভবন ও আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই কার্যক্রমের মধ্যে ২০টি ভবন এই প্রকল্পের আওতায় করা হবে। বাকি কাজ পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে করা হবে। এ অবস্থায় খুরুশকুলের অবশিষ্ট কাজ এই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পিডব্লিউডি, এলজিইডি ও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সর্বশেষ রেড শিডিউলের কারণে প্রকল্পের অবশিষ্ট নির্মাণ কাজের ব্যয় ও মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধির কারণে প্রকল্প পরিচালন ব্যয় তৃতীয়বার সংশোধন করতে হচ্ছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরের জন্য যারা গৃহহীন হবে তাদের জন্য পুনর্বাসনের বিষয়টি আগে প্রকল্পে যুক্ত ছিল না। ’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটি ১ হাজার ১৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এবং ২০১০ সালের জুলাই হতে ২০১৪ সালের জুনে বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে ৫০ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র পরিবার পুনর্বাসনের জন্য প্রকল্পটির ব্যয় ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে প্রথম সংশোধন করা হয়। বর্তমান সরকার ঘোষিত সবার জন্য বাসস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মোট ২ লাখ ৫০ হাজারটি পরিবারকে পুনর্বাসন করার জন্য প্রথম সংশোধিত ডিপিপির চেয়ে আরও ২ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে এবং মেয়াদ ২ বছর বৃদ্ধি করে মোট ৪ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা প্রক্কলিত ব্যয়ে এবং ২০১০ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি ২০১৭ সালের ২ মে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
সূত্র আরও জানায়, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করতে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে কক্সবাজারের খুরুশকুল মৌজায় পুনর্বাসনের জন্য ১৩৯টি পাঁচতলা আবাসিক ভবন ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই কার্যক্রমের মধ্যে ২০টি ভবন এই প্রকল্পের আওতায় করা হবে। বাকি কাজ পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে করা হবে। মূলত, খুরুশকুলের অবশিষ্ট কাজ এই প্রকল্প থেকে বাদ দেয়ার জন্য তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপি প্রস্তাব করা হয়েছে। এই কাজ খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ শীর্ষক নতুন একটি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) দেওয়া হয়েছে, যা প্রকল্প মুল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ৩ হাজার ৯৫০টি পাকা ব্যারাক নির্মাণ, চরাঞ্চলে ৫ হাজার ৪০০টি সিআই শিটের ব্যারাক, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৫ হাজার ২৭০টি সেমিপাকা ব্যারাক, নিজ জমিতে ৩ হাজার ৭১০টি সেমিপাকা ঘর ও এক লাখ ৬৬ হাজার ২৯০টি সিজিআই শিটের সিঙ্গেল ঘর নির্মাণ, খুরুশকুলে ২০টি ৬তলা ভবন, বিভাগীয় সদর, জেলা, উপজেলা সদর, পৌরসভা এলাকায় ৫০টি বহুতল ভবন, ৯০০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ৫৩৯টি ঘাটলা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ২০টি টঙ ঘর এবং ৫৮০টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর, ১৪ হাজার ৮৯০টি অগভীর এবং ১ হাজার ৩৮১টি গভীর নলকূপ স্থাপন, সুফলভোগীদের দক্ষতা বৃদ্ধি আত্মকর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ৮০ হাজার জনকে সমবায় ঋণ দেওয়া।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মো. জাকির হোসেন আকন্দ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটির আওতায় গৃহহীন, ভূমিহীন, ছিন্নমূল, অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।’