Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যশোরে কমছে না ডেঙ্গু


১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৯:৫৬

ঢাকা: গত আগস্ট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের অতীতের সব পরিসংখ্যান। তবে সেপ্টেম্বরে সারাদেশে কমতে শুরু করেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কিন্তু এর মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোরে। সামগ্রিকভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে শুরু করলেও যশোরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখনও অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশি।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৮৪ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যশোরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে যশোরে চিকিৎসাধীন আছেন ২৭৬ জন, যা ঢাকা মহানগরীর বাইরের জেলা শহরগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া, চলতি মৌসুমে দুই হাজার ৩০৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যশোরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন দুই হাজার ২৮ জন।

যশোরে রোগীর সংখ্যা না কমার বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে বর্তমান পরিস্থিতিতে যশোরে রোগী না কমার বেশ কিছু কারণ আমরা চিহ্নিত করেছি। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে সাতক্ষীরাতে তুলনামূলক ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম কারণ সেখানের পানি লোনা। যশোর অঞ্চলে যে জলবায়ু তাতে এখানের পানি মিঠা হওয়ার কারণে এখানে এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটছে। দাকোপ, পাইকগাছার দিকে লোনা পানি হওয়ার কারণে এই সব স্থানে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার তেমন নেই বললেই চলে। এখানে আবহাওয়াও আমাদের অনুকূলে না। বৃষ্টি হচ্ছে থেমে থেমে। বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা হচ্ছে এ কারণে যা এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য সহায়ক পরিবেশ।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘যশোরে ডেঙ্গু রোগ মূলত বেশি ছড়িয়েছে ঢাকা থেকে আসা ১৩০/১৪০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর কারণে। যা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে। আর তাই বর্তমানে দেখা যাচ্ছে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।’

যশোর শহরের অবস্থানকেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আরেকটা কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন ডা. দিলীপ কুমার রায়। তিনি বলেন, ‘যশোর আসলে বিভিন্ন স্থানের মানুষের ট্রানজিট রুট বা পয়েন্ট। যে কারণে দেখা যায় বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এখানে আসছে। বিভিন্ন স্থান থেকে রোগীরাও এখানে আসছে চিকিৎসা নিতে। আর আরেকটি কারণ হলো যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগর এই তিনটি স্থানই জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা। এছাড়াও বেশ কিছু স্থানে জলাবদ্ধতা আছে। আর এই সব স্থানেই লার্ভা বেশি পাওয়া যায়।’

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সনাক্তকরণ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত এলাকা শনাক্তকরণে চলতি বছরের ১৯ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত একটি জরিপ চালানো হয়। এ সময় আমরা কিছু এলাকা শনাক্ত করি। মনিরামপুরের এড়ান্দা, যশোর সদরের বানিয়াবাহু গ্রামে এবং কেশবপুরের আলতাপোলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি পরিমাণে পেয়েছি। আর তাই এসব এলাকাতেই জরিপ চালানো হয়। এসব এলাকাতে আমরা এডিস মশার লার্ভাও শনাক্ত করতে সক্ষম হই।’

ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি ইতোমধ্যেই নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. দিলীপ কুমার রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়েছে। সেখানে যশোরের উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মেয়র এবং দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিরা সেই সভায় ছিলেন। ইউএনওর নেতৃত্বে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেসব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বেশি রোগী আসছে সেই স্থানগুলো আমরা চিহ্নিত করে ইউএনওকে জানাচ্ছি। সেসব স্থানে ইউএনও সাহেব লার্ভিসাইড ওষুধ স্প্রে করার ব্যবস্থা করেছেন।’

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ইউনিয়নে এই কাজে একজন করে কর্মী নিয়োগ করেছেন ইউএনও। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিতরণ করা হচ্ছে ডেঙ্গু সচেতনতামূলক লিফলেট এবং স্থানীয় ডিশ ক্যাবল ব্যবসায়ীদের সাহায্য নিয়ে টিভি স্ক্রলেও সচেতনতামূলক কথা বলা হচ্ছে স্থানীয়দের জানানোর জন্য।

এছাড়াও যশোরের কেশবপুরের একটি এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন থেকে জারি গানের মাধ্যমে ডেঙ্গু সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য। সামগ্রিক বিষয় জানিয়ে আমরা যশোরে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়ে অনুরোধ করেছি স্বাস্থ্য অধিদফতরে। আশা করছি খুব দ্রুতই সাড়া পাবো বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সেবা বিষয়ে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. সাইফুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের সামর্থ্যের মধ্য দিয়ে রোগীদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সেবা দিয়ে যাওয়ার জন্য। রোগীর সংখ্যা না কমে আসা পর্যন্ত আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাবো। সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আমরা বিপদমুক্ত বলছি না। এখনো বিভিন্ন স্থান থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসছে আমাদের হাসপাতালে। আশা করছি প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিবে এবং এই অবস্থার উন্নতি ঘটবে।’

উল্লেখ্য, বেসরকারি হিসেবে যশোরে সাতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য বলা হলেও সরকারি হিসেবে এই জেলা শহরটিতে ২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। একটি মৃত্যু পর্যালোচনা করে সেটি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু নয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর)।

ডেঙ্গু ডেঙ্গু আক্রান্ত যশোর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর