Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চতুর্থদিনেও বেতন পাননি জারার শ্রমিকরা


১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:১২

ঢাকা: প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আন্দোলনের চতুর্থ দিনেও শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারেনি মিরপুরের জারা জিন্সের মালিকপক্ষ। শ্রমিকরা এখনও বেতনের দাবিতে মালিককে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত মালিকপক্ষের অর্থের যোগান হয়নি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজিএমইএ’র পরিচালক (শ্রম) রেজওয়ান সেলিম বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেশিনপত্র এখনও বিক্রি হয়নি। উনার (মালিক রিয়াজুল ইসলাম রাজু) বোনের জামাই মেশিনারিজ বিক্রি করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখনও বনিবনা হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে বিকালে সেলিম জানিয়েছিলেন, ‘১ কোটি ২০ লাখ টাকা নিয়ে একটি পক্ষ কারখানায় গেছে। তার মেশিনপত্র কিনতে সম্মত হয়েছে। আশা করি এই টাকা দিয়ে হয়তো কিছুটা সমাধান আসবে। আশা করছি, আজ রাতেই সমাধান পাওয়া যাবে।’

তবে রাতে আবার কথা হলে তিনি জানান, মেশিনপত্র বিক্রিতে এখনও আলোচনা চলেছে।

জানা গেছে, ক্রয় আদেশ না পাওয়া ও গার্মেন্টস পরিচালনায় মালিকপক্ষের ব্যর্থতার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মিরপুরের ‘জারা জিন্স’ নামের একটি কারখানা। এতে সাময়িকভাবে বেকার হয়ে পড়বে অন্তত ৮০০ শ্রমিক। এর আগেও বেতন ও বোনাস পরিশোধে কারখানাটিকে বেগ পোহাতে হয়েছে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে জারা জিন্সের অপারেটর নুপুর আক্তার মমতাজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বকেয়া বেতন ও আমাদের ন্যায্য পাওনা দিতে উনি আরও সময় চাচ্ছেন। কিন্তু আমরা উনাকে আর কোন সময় দিতে চাইনা। কোন কারণে আজকেও টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাকে ভেতরেই থাকতে হবে। দেখবো কতোদিনে উনি গার্মেন্টেসের ভেতরে থাকতে পারে?’

বিজ্ঞাপন

আরেক শ্রমিক মেহেদি হাসান (প্যাকিং ম্যান) বিকালে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও টাকা দেয়নি। ২ ঘন্টা পর আবার সিদ্ধান্ত জানাবে বলে প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। কিন্তু মনে হচ্ছে না আজকে উনি টাকা দিতে পারবে।’

এ বিষয়ে রাত সাড়ে আটটায় শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এখনও আশাবাদী আজকের মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হবে। অর্থের যোগান হয়েছি কী হয়নি সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। বিজিএমইএ’র নেতা, বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নেতা, কলকারখানা অধিদফতরের কর্মকর্তারা এখানে আছেন। ফলে আমরা এখনও আশা করছি। আইনশৃঙ্খলার বিষয়টিও আমাদের নজরে আছে।

চিড়িয়াখানা রোডের জারা জিন্স নামের ওই কারখানাটির মালিক ৫ জন।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে মালিকদের মধ্যে রয়েছে গোলাম মোস্তাফা, রেজা ও রিয়াজুল ইসলাম রাজু। বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি। তবে শ্রমিক পক্ষ রিয়াজুল ইসলাম রাজুকেই মালিক হিসেবে জানেন। আর কারখানাটিতে তাকেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।

এর আগে, রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বকেয়া বেতনের দাবিতে মিরপুরের রাস্তায় নামে জারা জিন্সের কর্মীরা। রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ দেখায়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের দাবি, টানা তিনমাস ধরে বকেয়া বেতন-ভাতা দিতে টালবাহানা করছে মালিক পক্ষ। একাধিকবার প্রতিবাদ করেও এর সমাধান পাননি তারা। শ্রমিকরা মিরপুরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে যানজট তৈরি হয় গোটা রজধানীতে।

পরে পরিস্থিতি সামলাতে ওইদিন বিকেলে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিজিএমইএ’র প্রতিনিধিদের নিয়ে মালিকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। প্রায় সাত ঘন্টার টানা আলোচনা শেষে কারখানার মালিক সিদ্ধান্ত নেন বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করবেন। শ্রমিকরা এ সিদ্ধান্ত মানলেও কারখানা থেকে মালিক রিয়াজুল ইসলাম রাজুকে আর বের হতে দেননি। শ্রমিকরা শর্ত দেন টাকা পাওয়ার পরেই তিনি কারখানা থেকে বের হতে পারবেন।

এদিকে, গত চার মাসে দেশের ৩৫টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিবেশী প্রতিযোগী দেশের সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় দেশের কারখানাগুলোর ক্রয় আদেশ কমে যাওয়ায় এসব পোশাক কারখানা বন্ধের অন্যতম কারণ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৭ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন। জারা জিন্সের বন্ধের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বন্ধের তালিকায় নতুন করে আরও একটি নাম যুক্ত হতে চলছে। আর অন্তত ৮০০ শ্রমিক নতুন করে বেকার হতে চলছেন।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিএস

গার্মেন্টস পোশাক কারখানা বেতন

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর