Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুধু গাজীপুর ডিপোতেই ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ!


২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:৫৩

ঢাকা: বিআরটিসির সব ডিপোই কমবেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। একেক জায়গায় একেকরকম। ডিপো ম্যানেজারদের একচ্ছত্র আধিপত্য, ঘুষ, দুর্নীতি বা অর্থ আত্মসাৎ করেও দিব্বি বহাল তবিয়্যতে আছেন। প্রায় সব ডিপোতেই কম বেশি বাস অচল হয়ে পড়ে আছে। চলছে কোনো না কোনো সিন্ডিকেটের হাতেই।

সারাবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে গাজীপুর বাস ডিপোর কিছু দুর্নীতির চিত্র। এখানকার ম্যানেজার শাহরিয়ার বুলবুল। তার ডিপোতে ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া ৯৫ লাখ ৩৪ হাজার ৮৪৬ টাকা। তার দুই বছরের মেয়াদে বেতন-ভাতাদির এই বকেয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি।

প্রথম পর্ব: ভারত থেকে আনা বিআরটিসি বাসে হাত দিলেই বডি বেঁকে যায়!

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই ডিপোরে অধীনে প্রতি মাসে শুধু কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গাউছিয়া পর্যন্ত আর্টিকুলেটেড বাস থেকে ৮ লাখ ১১ হাজার ৪৬২ টাকা হারে ট্রিপ চুরি করে ২ বছরে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭৫ হাজার ১শ টাকার রাজস্ব আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এই রুট পরিচালনাকারী ইজারাদার দাবিদার জিল্লুর রহমান বিআরটিসির কাছে একটি আবেদনে দৈনিক ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে প্রতি তারিখ অনুযায়ী ২ কোটি ২৯ লাখ ২৬ হাজার দুইশ টাকা জমা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। এই জমার বিপরীতে রশিদ দেওয়ার জন্য ডিপো ম্যানেজার বুলবুলের কাছে চিঠি দেন জিল্লুর। অনুসন্ধানে সেই চিঠি পাওয়া গেছে।

এই চিঠির সূত্র ধরে দেখা যায়, ম্যানেজার বুলবুল তার দুই বছরে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭৫ হাজার ১শ টাকা  রাজস্ব আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া প্রধান কার্যালয়ের মাসিক সমম্বয় সভার হিসাব অনুয়ায়ী গাজিপুর বাস ডিপো থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এই সময়ে জমা পড়েছে মাত্র ১ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ ৩ কোটি ২৪ লাখ ৫ হাজার ৮৫০ টাকা কম জমা পড়েছে। এ হিসেবে প্রতি মাসে ৮ লাখ ১১ হাজার ৪৬২ টাকা হারে ট্রিপ চুরি করা হয়। ২ বছরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭৫ হাজার একশ টাকা। এ টাকা তখনকার ম্যানেজার শাহরিয়ার বুলবুল প্রধান কার্যালয়ে জমা দেননি।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় পর্ব: যাত্রী ঝোলে বিআরটিসি বাসে, শ্রমিকের বেতন বকেয়া মাসের পর মাস

অনেকের অভিযোগ ম্যানেজার বুলবুল শুধু এ টাকাই বেহাতই করেননি, ডিপোর কোনো বাস মেরামত না করে পকেটে ভরেছেন।

ম্যানেজার বুলবুলের পরে এ বছরের এপ্রিলে ম্যানেজার হিসেবে জিয়াউর রহমান দায়িত্ব নিয়ে দেখতে পান, দীর্ঘদিন থেকে এই ডিপোর বাসগুলো মেরামতের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। গাড়িগুলো সঠিক ভাবে মেরামত না করার বিষয়টি প্রধান কার্যালয়ে একটি চিঠি দিয়ে অবহিত করেন বর্তমান ম্যানেজার।

ম্যানেজার জিয়াউর রহমান চিঠিতে বলেন, ডিপোর ৫৩টি বাসে দীর্ঘদিন ফ্যান নেই। ১১শটি ফ্যানের জায়গায় রয়েছে মাত্র ৪০ টি ফ্যান। একই অবস্থা বাসের চাকায়ও। চাকাগুলো নতুন করে লাগাতে হবে। আগের ম্যানেজার থাকাকালে কোনো বাস মেরামত বাবদ অর্থ খরচ হয়নি।

গাজীপুর বাস ডিপোর সাবেক ম্যানেজার শাহরিয়ার বুলবুলের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাস মেরামত হয়েছে কি না তা বর্তমান ম্যানেজারের কাছ থেকে জেনে নেন।’

এ বিষয়ে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ে দেওয়া বর্তমান ম্যানেজারের চিঠি থেকে জানা যায়, বাসগুলো দীর্ঘদিন মেরামতহীন অবস্থায় পড়ে আছে।

তৃতীয় পর্ব: সিন্ডিকেট চালাচ্ছে বিআরটিসি বাস, লাভের ভাগ কর্মকর্তাদের পকেটে

বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ে ইজারাদারদের রাজস্ব কম জমা হওয়া প্রসঙ্গে বুলবুল বলেন, ‘ইজাদারের সেই চিঠি তিনি দেখেছেন। তিন ডিপোর বাস চলতো কুড়িল তিনশ ফিট সড়কে। আমি শুধু গাজীপুর ডিপোর রাজস্ব জমা দিয়েছি। যে কারণে ইজারাদারের জমার রশিদ আবেদনে টাকার পরিমাণ এবং প্রধান অফিসে জমার পরিমাণে কমবেশি হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

গাজীপুর ডিপো সূত্র জানায়, কুড়িল তিনশ ফিট সড়কে বিআরটিসির ইজারা দেওয়া অবৈধ। বিআরটিসির ইজারাদার হিসেবে কোনো লিখিত অনুমোদন নেই। তবু সাবেক ডিপো ম্যানেজার শাহরিয়ার বুলবুল ও সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদের অবৈধ যোগসাজসে এ রুটে বাস চলতো। বিআরটিসির কোনো নিজস্ব লোক এ রুটে বাস চালায়নি।

চতুর্থ পর্ব: ‘অবৈধ’ কাজের সঙ্গী না হলেই হতো বদলি বা চাকরিচ্যুতি!

এ ব্যাপারে ইজারাদার পরিচয় দেওয়া জিল্লুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি যে পরিমাণ রাজস্ব দিয়েছেন, তার রশিদ তাকে দেওয়া হয়নি। পরে প্রধান অফিসে দেখা যায় তার পুরো রাজস্ব জমার তথ্য প্রধান কার্যালয়ে দেওয়া হয়নি। এছাড়া আগের চেয়ারম্যানকে রাজস্বের বাইরেও টাকা দিতে হতো।

ইজারাদার পরিচয় দেওয়া আরেকজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, ইজারার রাজস্ব ছাড়াও চেয়ারম্যান ও ডিপোর ম্যানেজারকে মাসে ৩ লাখ টাকা করে দিতে হতো। এটা নির্ধারিত ফি ছিল। এ টাকা ডিপো ম্যানেজারের মাধ্যমে প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম অপারেশন মনিরুজ্জামান বাবুর হাত ধরে চেয়ারম্যানের কাছে পৌঁছাতো।

নতুন চেয়ারম্যান আসার পর ইজারাদাররা ‘টাকা দেওয়া বন্ধ’— এ ঘোষণা শুনেছেন। কিন্তু ডিপো ম্যানেজার পর্যায়ে টাকা দিতে হবে কি না, সেটা নিয়ে তারা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পাননি।

শনিবার ষষ্ঠ পর্বে পড়ুন-

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানেনি বিআরটিসি, বন্ধ স্মার্ট কার্ডের ব্যবহার

অর্থ আত্মসাৎ গাজীপুর বাস ডিপো বিআরটিসি রাজস্ব আত্মসাৎ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর