ফতুল্লায় গ্রেফতার জঙ্গি রুমি আহছানউল্লার শিক্ষক, ছোট ভাই সহযোগী
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:৩৮
ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকায় জঙ্গি আস্তানার অভিযানে গ্রেফতার নব্য জেএমবির সদস্য ফরিদ উদ্দিন রুমি (২৭) আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক। এই অভিযানের আগেই গ্রেফতার হয়েছেন তার ছোট ভাই মিশুক খান মিজান (২৩)। তিনি নারায়ণগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তড়িৎকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বলছে, এই দুই ভাই তক্কার মাঠের ওই বাসাটি ভাড়া নিয়ে বোমা তৈরির ল্যাব বানিয়েছিলেন। সেই বাসায় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) চালানো অভিযানে একে-৭৪ আকৃতির দুইটি খেলনা রাইফেল, একটি খেলনা পিস্তল, তিনটি রেডি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসসহ (আইইডিস) বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন- ফতুল্লায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ : আটক ৩
অভিযানে পর সিটিটিসি’র প্রধান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এই জঙ্গি আস্তানায় শক্তিশালী ডেটোনেটরসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার খামারবাড়ি, মালিবাগ ও সায়েন্স ল্যাবে পুলিশের ওপর যে বোমা হামলা হয়েছিল, তার সঙ্গে এই জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া বোমা ও বিস্ফোরকের মিল রয়েছে। সেগুলো পর্যায়ক্রমে ধ্বংসের কাজ চলছে। অন্যান্য আস্তানায় যে ধরনের ল্যাব বা কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে, তার চেয়ে ফতুল্লার এই ল্যাবটি ভিন্ন ধরনের।
জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া সরঞ্জাম
সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, মিশুক খান মিজানকে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় তার নাম বলে জামাল উদ্দিন রফিক। তবে যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, তার প্রকৃত নাম মিশুক খান মিজান, তিনি নারায়ণগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ালেখা করেন। পরে সোমবারের অভিযানে গ্রেফতার হন ফরিদ উদ্দিন রুমি। তিনি আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।
আরও পড়ুন- ফতুল্লার জঙ্গি আস্তানাটি বোমা তৈরির ল্যাব
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা মূলত নব্য জেএমবির সদস্য। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও কয়েকজনের নাম বলেছেন। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। রুমির স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনুকেও (২১) জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জঙ্গি তৎপরতায় তিনিও জড়িত কি না, তা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমরা বলতে পারব।
ল জানান, নব্য জেএমবির সদস্য মিশুক খান মিজানের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়, তক্কার মাঠ এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপাক জয়নাল আবেদিনের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের আগেই মিজানের ভাই ফরিদ উদ্দিন রুমি ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, রফিক ও ফরিদ দু’জনই নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তারা এই নেটওয়ার্কের আরও কিছু জঙ্গি সদস্যের নাম বলেছেন। তাদের ধরতে সিটিটিসির একাধিক টিম কাজ করছে।
আরও পড়ুন- ‘পুলিশের ওপর হামলার বোমা তৈরি হতো ফতুল্লার আস্তানায়’
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ওই বাড়িতে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। আমরা এগুলো উদ্ধার ও ডিস্পোজ করার কাজটি শুরু করতে যাচ্ছি। আশপাশের লোকজন সরিয়ে দিয়ে এ কাজ করা হবে। আমাদের বিস্ফোরক দলের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, সম্প্রতি ঢাকায় যে কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোতে ব্যবহৃত বিস্ফোরক ও আইডি’র সঙ্গে এখান থেকে উদ্ধার করা বিস্ফোরক ও সরঞ্জামের মিল আছে। যারা ধরা পড়েছে, তারা কেউ কেউ এসব ঘটনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত থাকতে পারে।
গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, পুলিশের ওপর বেশ কয়েকটি হামলা হলেও এর পেছনের চক্রটিকে ধরতে পারছিলেন না সিটিটিসি কর্মকর্তারা। এর মধ্যে যেসব জঙ্গি ধরা পড়েছেন, তাদের কাছ থেকেও এসব হামলার তথ্য মিলছিল না। শেষ পর্যন্ত মিজানের কাছ থেকে পাওয়া যায় ফতুল্লায় বোমা তৈরির ল্যাবরেটরির সন্ধান। সেখানে বোমাজাতীয় যা কিছু পাওয়া গেছে, তা দেখে পুলিশ ধারণা করছে, এখান থেকেই পুলিশের ওপর বোমা হামলার জন্য বিস্ফোরক সরবরাহ করা হতো।
সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, নারায়ণগঞ্জ ঢাকার খুব কাছে। তারা এমনই একটি জায়গা বেছে নিয়ে যেটি ঢাকা থেকে খুব কাছে, কিন্তু জনবহুল এবং স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। এ ধরনের জায়গায় সাধারণ কেউ কারও খোঁজ নেয় না। সেসব বিবেচনাতেই তারা বোমা তৈরির ল্যাবরেটরি স্থান হিসেবে ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকাটিকে বেছে নিয়েছিল।
আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জঙ্গি আস্তানা তক্কার মাঠ নব্য জেএমবি ফতুল্লা ফরিদ উদ্দিন রুমি বোমা বানানোর ল্যাব