অব্যাহতির ঘণ্টা বাজলো রাবির সেই প্রাধ্যক্ষের
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৭:৩৫
রাজশাহী: প্রাধ্যক্ষের বাসায় যৌন হয়রানির ঘটনায় ওই প্রাধ্যক্ষকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনের ভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘তোমরা যে দাবি করেছ তা আমি দেখেছি। তোমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক মনে হয়েছে। আর যে ঘটনা ঘটেছে তার সঠিক বিচার করা হবে।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টার মধ্যে অধ্যাপক বিথিকা বণিকের পদত্যাগ দাবি করলে উপাচার্য বলেন, ‘দুই ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রক্রিয়া আছে। সেই নিয়মানুসারে কাজ করা হবে। এ জন্য দুই-তিন দিন সময় দিতে হবে।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা না মানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘তোমাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হলো। কিন্তু এরজন্য একটু সময় দিতে হবে।’ এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নেন।
তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, আগামী রোববারের মধ্যে যদি অধ্যাপক বিথিকা বণিককে সব পদ থেকে অব্যাহতি না দেওয়া হয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।
এর আগে যৌন হয়রানির ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
পরে বিক্ষোভ মিছিল করে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সেখানে আন্দোরনরত শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষের রুমে তালা লাগিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা, বিথিকা বণিককে প্রাথমিক স্টেটমেন্ট দেওয়া, মেয়েটির পরিবারে কোনো প্রকার চাপ না দেয়া, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ করা, কুরুচিপুর্ণ কথা বলেছে তার ক্ষমা চাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে পদক্ষেপ নেওয়া প্রতিটি হল, ডিপার্টমেন্ট সেল গঠন করা এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা লায়লা আরজুমান বানু বলেন, এ ঘটনার জন্য অভিযুক্তকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেন।
আন্দোলনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম তমাল বলেন, ‘আমাদের এক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। হল প্রাধ্যক্ষ একটি মেয়েকে যখন নিরাপত্তা দিতে পারেননি তাহলে হলের এতগুলো মেয়ের নিরাপত্তা কীভাবে দেবেন? তাই আমরা অবিলম্বে বিথিকা বণিকের পদত্যাগ চাই।’
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শ্যামল বণিক নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার দিনগত রাতে নগরীর ধরমপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।
গ্রেফতার শ্যামল বণিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক ও হল প্রভোস্ট বিথিকা বণিকের ভাই।
ওসি হাফিজুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী ছাত্রী শ্যামল বণিকের আত্মীয়। মঙ্গলবার রাতে যোজক টাওয়ারের তৃতীয় তলায় শ্যামল বণিকের ভাগ্নিকে পড়াতে যান ওই ছাত্রী। শ্যামল বণিকও ওই বাসায় থাকেন। ওইদিন রাতে শ্যামল বণিক ওই শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেন। এ সময় ভুক্তভোগী জাতীয় নিরাপত্তা সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
অধ্যাপক বিথীকা বণিকের দাবি, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি। ওইদিন রাতে হলের কাজে আমি আমি চলে আসি। বাসায় কী হয়েছিল সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’