Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতা মোকাবিলায় সম্পদ বিনিয়োগ করুন’


২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২৩:৩৭

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতা মোকাবিলায় সম্পদ বিনিয়োগ করার জন্য জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতা মোকাবিলায় সম্পদ বিনিয়োগ করার জন্য জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকালে জাতিসংঘ সদর দফতরের ১ নম্বর সম্মেলন কক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আয়োজিত ‘টেকসই সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি: মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতাসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক পার্শ্ব অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ড. লোতে শেরিং, নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যামন্ত্রী ওপেন্দ্র জাদব এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও এসইএআরও’র আঞ্চলিক পরিচালক ড. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বহু সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা দ্রুত আরোগ্যে সহায়ক হয়; দ্বিতীয়ত, একই ব্যক্তির মধ্যে দুই বা ততধিক রোগের উপস্থিতির ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা অন্যান্য রোগের আরোগ্যে সহায়ক হয়; তৃতীয়ত, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হাসপাতালের দেওয়া পরামর্শে কোনো চিকিৎসার ক্ষেত্রে অব্যাহত ফলোআপ সেবা দিতে পারে।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রায়ই মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতাকে বাদ রাখা হয়। কিন্তু মানসিক রোগ প্রতিরোধে আমাদের প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী ও দক্ষ সেবাদান ব্যবস্থা থাকা দরকার, যেন তারা ওষুধ ও সুলভ মানসম্মত সেবা পায়। আমাদের বিশেষ কৌশলও দরকার।

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৮ সালে তার সরকারের প্রথম মেয়াদে কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক চালু করেছিল। তিনি বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রধানত গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত ১৪ হাজারের বেশি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। এ ধরনের ক্লিনিক স্থাপনে কমিউনিটি জমি দান করে থাকে এবং সরকার বিনা খরচে ভবন নির্মাণ, দক্ষ কর্মী প্রদান এবং ওষুধ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি প্রদানে একটি কার্যকর মডেল হিসেবে স্বীকৃত, যাতে প্রতিরোধমূলক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মৌলিক সেবা অন্তর্ভুক্ত।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালে তার সরকার ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩’ এবং ২০১৮ সালে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন’ প্রণয়ন করে। তিনি বলেন, “এখন আমরা বহু অংশীদারভিত্তিক, সামগ্রিক ও সার্বিক কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি ‘মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কৌশল পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করছি।” আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে তাদের মূল্যবান অভিজ্ঞতা বিনিময়ে এগিয়ে আসবে এবং কারিগরি ও আর্থিক সম্পদ শনাক্তকরণে সহায়তা করবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।

স্বাস্থ্যকে উন্নয়ন অভিযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অব্যাহত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য এটি অপরিহার্য। সার্বজনীন শিক্ষা কর্মসূচি সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের আর্থিক দুর্ভোগ ছাড়া মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’ও মানুষকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।

এসডিজি’র তিন ও চার নম্বর লক্ষ্য স্বাস্থ্য নিরাপত্তার অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতাও মানবাধিকারের ধরনের পাশাপাশি উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে একটি বৈশ্বিক গণস্বাস্থ্য হিসেবে স্বীকৃত। ডব্লিউএইচও’র প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনায়ও একটি অংশীদারিত্বমূলক সমাজের কথা বলা হয়েছে, যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মর্যাদা ও সমান অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে। বাংলাদেশে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই দুই ইস্যুই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখছি।

মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালকের উপদেষ্টা এবং অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি ও এনডিডিজ, বাংলাদেশের চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ, ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রধান এবং কর্মসূচি বিভাগের সহযোগী পরিচালক ড. স্টেফান সোয়ার্টলিং পিটারসন, গ্লোবাল পার্টনার্স ইউনাইটেড-এর সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা ইবলিন শেরো, আদেলফি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর অব এডুকেশন স্টিফেন শোর, হার্বার্ড মেডিকেল স্কুলের গ্লোবাল হেলথের পার্শিং স্কোয়ার প্রফেসর বিক্রম প্যাটেল ও আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশনের প্রজেক্ট ২০২৫-এর সিনিয়র পরিচালক মাইকেল রোজানফ অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বাসস।

টেকসই সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি প্রতিবন্ধিতা মোকাবিলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানসিক স্বাস্থ্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর