সিলেটের ৪ জেলায় বন বাড়ছে, লক্ষ্য জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:৩১
ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় নতুন করে বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বনভূমির পরিমাণ বাড়িয়ে কার্বন ধারণক্ষমতা বাড়ানো যাবে। পাশাপাশি মিশ্র প্রজাতির বাগান তৈরির মাধ্যমে বন্যপ্রাণির আবাসস্থলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বন বিভাগে পুনঃবনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন বন অধিদফতর। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় বাস্তবায়নের জন্য এই প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) পরবর্তী সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ প্রকল্পে বাগান তৈরির কার্যক্রম প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমানো সম্ভব হবে। এছাড়া দেশীয় প্রজাতির গাছের চারা দিয়ে বাগান তৈরির মাধ্যমে বনভূমির জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ করাও এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগে মোট ভূমির ৭০ হাজার ৩২১ দশমিক ৬২ হেক্টর বনভূমি সিলেট বন বিভাগ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ অঞ্চলে বন বিভাগের প্রধান চ্যালেঞ্জ ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যতের জন্য কাঠ, জ্বালানি ও ঘাসজাতীয় বনজ দ্রব্যের জোগান নিশ্চিত করা। পাশাপাশি ক্ষয়িষ্ণু বন সংরক্ষণও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে, এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বিরান পাহাড়ি বনভূমি রয়েছে, যেখানে নতুন বাগান তৈরির সুযোগ রয়েছে। এসব জায়গায় প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সমৃদ্ধ করা, প্রাকৃতিকভাবে গজানো চারা সংরক্ষণ, ব্লক বাগান, উডলট বাগান, সড়ক বনায়ন, রিডল্যান্ড বনায়ন, আগর বাগান তৈরি, বাঁশ, বেত ও মূর্তা বাগান পদ্ধতিতে নতুন বাগান তৈরি সম্ভব।
সেক্ষেত্রে সিলেট অঞ্চলে বনভূমির জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ করা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে বনায়নে সম্পৃক্ত করে তাদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের মতো উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতেই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে— ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বনায়ন; বিভাগীয় বন কর্মকর্তার জন্য একটি কার্যালয়, একটি এসিএফ অফিস, চারটি রেঞ্জ অফিস ও আটটি বিট অফিস নির্মাণ; ১৯টি জলাভূমি উন্নয়ন; এক হাজার মিটার আরসিসি রোড, পাঁচটি কার্লভার্ট ও ৩০০ মিটার সাইড ড্রেন নির্মাণ এবং ১৬টি এয়ারকুলার, ১২টি পানির পাম্প, তিনটি ফটোকপিয়ার মেশিন, পাঁচটি জেনারেটর, পাঁচটি কম্পিউটার, একটি জিপ, একটি পিকআপ, ১০টি মোটরসাইকেল ও পাঁচটি ইঞ্জিনযুক্ত নৌকা কেনা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মো. জাকির হোসেন আকন্দ পরিকল্পনা কমিশনে মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ধরনের বনায়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। ফলে সিলেট অঞ্চলে বনজ সম্পদ বাড়বে, একইসঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও বাড়বে। নতুন বন তৈরি হলে একটি জলবায়ু সহিষ্ণু স্থিতিস্থাপক বনে পরিণত হবে, মোট বনের পরিমাণ বাড়বে এবং বনজ সম্পদ আহরণের পরিমাণ বাড়বে। এছাড়া বনজ সম্পদের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করাও সম্ভব হবে।