৯ বছর ধরে ঝুলে থাকা শিক্ষা আইনের ভবিষ্যৎ জানে না মন্ত্রণালয়
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৮:০০
ঢাকা: গত ৯ বছর ধরে মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে শিক্ষা আইনের খসড়া। খসড়া চূড়ান্ত করতে এই মাসেই বিশেষ বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির অনুপস্থিতির কারণে তা হয়নি। খসড়া চূড়ান্তকরণে পরবর্তী সভা কবে হবে সে বিষয়েও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির স্বামী ভারতে চিকিৎসাধীন থাকায় বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে তাকেও। সম্প্রতি দেশে ফিরে মন্ত্রণালয়ের কাজে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তিনি। তবে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার বৈঠকের বিষয়ে তিনি এখনও কোনো নির্দেশনা দেননি বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, মন্ত্রণালয়ে এখন অনেকগুলো কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরমধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি, আত্তীকৃত কলেজ শিক্ষকদের সরকারিকরণসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ জমা হয়ে আছে। সবগুলোই নতুন বছরের আগেই শেষ করার চেষ্টা করছে মন্ত্রণালয়। এর ফাঁকে শিক্ষা আইন খসড়া চূড়ান্ত করতে মিটিংয়ের নতুন সময় দেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।
‘জাতীয় শিক্ষানীতি-১০’ বাস্তবায়নে ২০১১ সালে শিক্ষা আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। এরপর প্রায় ৯ বছর খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমনকি এই আইনের খসড়াটি তিন বার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফেরত এসেছে। এবার চতুর্থবারের মতো খসড়াটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। এ জন্য বিদেশি দুইজন পরামর্শকও নিয়োগ করেছে সরকার।
শিক্ষা আইনের খসড়াটি কেনো চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না এ ব্যাপারে কথা বলতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘নোট-গাইড নিষিদ্ধ ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধের বিধি থাকায় আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে সময় যাচ্ছে। একটি সিন্ডিকেট আইনটি ঠেকাতে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করছে। কোচিং বন্ধসহ শিক্ষা সহায়ক যেসব আইন আমরা প্রণয়ন করতে চাচ্ছি এটি হয়তো অনেকের স্বার্থে আঘাত হানবে এ জন্য তারা মানতে পারছেন না।’
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি কাজে যোগ দেওয়ার পর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি কার্যক্রম নতুন করে গতি পেয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর মাসেই ১ হাজার ৭৬৩টি স্কুল ও কলেজের এমপিওভুক্তির প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এরপর সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ হবে। তালিকাটি এখন মন্ত্রীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে।’
মন্ত্রণালয়ে এবার ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আবেদন জমা পড়ে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যাচাই-বাছাই করে ২ হাজার ৭৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রাথমিক শর্ত পূরণ করে। সেখান থেকে ১ হাজার ৭৬৩টি স্কুল ও কলেজের এমপিওভুক্তি পাবে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এবার চারটি মানদণ্ড বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার। প্রতি বিষয়ে ২৫ নম্বর করে ১০০ নম্বরে মার্কিং করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজারেরও বেশি। যেখানে কর্মরত প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি মাসে বেতন ও ভাতা সরকার দিয়ে থাকে।