Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপ ও চর হতে পারে পর্যটনের বিশাল জগৎ


৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:০৬

ঢাকা: ‘কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ঘিরে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সেখানে উন্নয়ন হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। জমির দাম আকাশছোঁয়া, ফলে বিনিয়োগে আগ্রহ কম মানুষের। জমি কেনা-বেচায়ও রয়েছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি। এসব ঠেকানো না গেলে কুয়াকাটাকে ঘিরে যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা, তা কাগজে-কলমেই থেকে যাবে’ বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বরিশাল বিভাগের সাংবাদিকদের সংগঠন বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিডিজেএ) ‘পদ্মা সেতু ও পায়রাবন্দর: দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশিষ্টজনরা।

বিজ্ঞাপন

বক্তারা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চর ও দ্বীপকে কেন্দ্র করে মালদ্বীপের মতো পর্যটনের বিশাল জগৎ তৈরি করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। পদ্মাসেতু চালু হলে সেই সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে।

তবে যেকোনো উন্নয়নে পরিবেশ-প্রকৃতির সুরক্ষা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগেরও দাবি জানান বক্তারা। তারা বলেন, পদ্মাসেতু ও পায়রাবন্দরের মতো বৃহৎ প্রকল্পের কারণে নদী-খাল ও সবুজ বনানী পরিবেষ্টিত বরিশাল অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের প্রচলিত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসারও আহ্বান জানানো হয় সেমিনারে।

সড়কনির্ভর উন্নয়নে খাল, নদী ও জলাশয় প্রথম বলি হয়—উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক ছোট ছোট নদী ও খালের মৃত্যু হয়েছে এ কথা সবার জানা। আবার সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ছোট নদীর ভিতরেও অনেক পিলার দেওয়ায় নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়, যা ধীরে ধীরে নদীকে মেরে ফেলে। পক্ষান্তরে এটিও ঠিক যে, সহজ ও দ্রুত যোগাযোগের জন্য সড়ক ও রেলপথই বেশি জনপ্রিয়। সুতরাং সড়ক, রেলপথ, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করতে গিয়ে যাতে নদী-খাল ও জলাশয়ের মৃত্যু না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি বলে উল্লেখ করেন আলোচকরা।

বিজ্ঞাপন

সভা সঞ্চালন করেন সংগঠনের সভাপতি আমীন আল রশীদ। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব সৈকত। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষক তৌহিদুল আলম।

জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গে তৌহিদুল আলম বলেন, ‘অনেক দেশেই সরকার জমি অধিগ্রহণ করলেও সেটি একবারে মালিকের কাছ থেকে না কিনে বরং বার্ষিক ভাড়াভিত্তিতে নিয়ে থাকে। অর্থাৎ জমির মালিকানা ঠিকই থাকবে এবং প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট হারে জমির মালিক জমির ভাড়া পাবেন। কিন্তু ওই জমি ব্যবহার করবে সরকার। এতে একদিকে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প যেমন বাস্তবায়িতে হবে, তেমনি কেউ চিরদিনের মতো জমির মালিকানা হারাবেন না। উপরন্তু ক্ষতিপূরণের বেশি পয়সা পাওয়ার আশায় জমিতে অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা ও নির্মাণ ও অনিয়ম-দুর্নীতিও বন্ধ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, পদ্মাসেতু ও পায়রা বন্দর হলে তার প্রভাব পুরো দেশের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তবে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে কাজের গুণগত মান। দুর্নীতি রোধ করতে হবে।

কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন পায়রা বন্দর চালু হলে ওই এলাকার চিত্র বদলে যাবে। কিন্তু দুর্নীতি ও পরিকল্পনায় ঘাটতি থাকলে উন্নয়ন সম্ভব নয়।

বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহ আলম বলেন, পদ্মাসেতু চালু হলে কুয়াকাটায় পর্যটকদের যাতায়াত বেড়ে যাবে। ওই এলাকায় বুলেট ট্রেন চালু হবে। সেক্ষেত্রে কুয়াকাটা ও আশপাশে বেশ কিছু দ্বীপ আছে সেগুলোর সঙ্গে ভালো ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তাহলে পর্যটকরা আকৃষ্ট হবে।

পটুয়াখালীর পৌরসভার মেয়র ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালী ও এর আশপাশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এখানে প্রচুর খালি জমি থাকলেও কেনার পরই মামলার কবলে পড়তে হয়। এজন্য বিদেশিরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দক্ষিণাঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এক টেবিলে বসার তাগিদ দেন।

এছাড়া সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য, সাংবাদিক নেতা শেখ মামুনুর রশীদ ও নুরুল ইসলাম হাসিবসহ বরিশাল বিভাগের বিশিষ্টজনরা।

পর্যটন বরিশাল সম্ভাবনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর