Saturday 19 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছি! ছি! ভিসি


১ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:৩৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কিছু কিছু মানুষের মান-ইজ্জত বড়ই শক্ত; জুতাপেটা করলেও যায় না। এ কথাটি আমার মনে এলো গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগ প্রসঙ্গে। শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে টানা আন্দোলন করে আসছে, তাতে তার বোধোদয় হয়নি। কিন্তু যখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত কমিটি তাকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করলেন, তখন তিনি বুঝলেন, তার পায়ের নিচে মাটি আর নেই। দুই দফায় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করলেন, সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাতের আঁধারে পুলিশ প্রহরায় পালিয়ে যাওয়াটা যে অসম্মানের সেটা বোঝার মত সংবেদনশীলতা তার নেই। থাকলে অনেক আগেই তিনি পদত্যাগ করতেন। তার ইজ্জত বড়ই শক্ত। জুতাপেটা করলেও যায় না। একজন ভিসি প্রসঙ্গে এমন তুলনা করতে হচ্ছে বলে আমি খুবই লজ্জিত। কিন্তু এই কলামের আগের লেখায় খোন্দকার নাসিরউদ্দিন প্রসঙ্গে আমি লিখেছিলাম, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তো দূরের কথা, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক হওয়ার অধিকারও তার নেই।‘ তাই একজন ভিসি যতটা সম্মান প্রাপ্য, ততটা তিনি নন। তাই খোন্দকার নাসিরউদ্দিন উপাচার্য হলেও, তার প্রসঙ্গে ‘জুতাপেটা’ অপ্রাসঙ্গিক নয়।

বিজ্ঞাপন

খোন্দকবার নাসিরউদ্দিন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানি না আমি। খালি একজন ছাত্রীর সাথে তার কথোপকথনের অডিও শুনেই আমি তার সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে বলেছিলাম। পদত্যাগের সুযোগ দেয়াটা তার জন্য অনেক সম্মানের। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তাকে দোষী সাব্যস্ত করে অপসারণ করা উচিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ফাতেমা তুজ জিনিয়া ফেসবুকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী হওয়া উচিত?’ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খোন্দকার নাসিরউদ্দিন সেই শিক্ষার্থীকে বলেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী?… ফাজিল কোথাকার… বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী তুমি জানো না? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তোমাদের মতো বেয়াদব তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী তোর আব্বার কাছে শুনিস। গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোদিন? আমি খুলছি বলেই তো তোর চান্স হইছে। না হলে তো তুই রাস্তা দিয়া ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলে-মেয়ে।’ এটুকু শুনেই আমি বুঝেছিলাম এই অভদ্রলোকের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তো দূরের কথা কোনো কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকও হওয়া উচিত নয়। এখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত সূত্রে জানতে পারছি, এটা আসলে কোনো অপরাধই নয়, তার অপরাধ আরো বড় বড়। অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে। কমিটি সুপারিশ দেয়ার পর সে রাতেই তিনি পুলিশ প্রহরায় ক্যাস্পাস ছাড়েন। পরদিন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে ইউজিসির তদন্তে কিন্তু তাকে প্রত্যাহার এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। আমি এখনও দাবি করছি, তাকে পদত্যাগের সুযোগ না দিয়ে অপসারণ করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে যেন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হোক। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়োগ, ভর্তি ও কেনাকাটা থেকে শুরু করে একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া কথায় কথায় শিক্ষার্থীদের বহিস্কার করা ছিল তার বড় অস্ত্র। গত এক বছরেই অন্তত ২৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছিল।

উপাচার্য নামের এই কলঙ্কের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও উঠেছে। নিজের কফিনে শেষ পেরেকটা তিনি নিজেই ঠুকেছেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নির্দেশ দিয়ে। আগে শুনতাম উপাচার্যরা শিক্ষার্থীদের আগলে রাখতেন, আর এখন এই উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। খোন্দকার নাসিরউদ্দিন আসলে শুধু গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কেই ধ্বংস করেননি; তিনি ধ্বংস করেছেন উপাচার্য পদের মর্যাদাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মানেই জ্ঞানের উৎকর্ষের শীর্ষে থাকা ব্যক্তি। যাকে দেখলে শ্রদ্ধায় নুয়ে যাবে সবার মাথা।

সেদিন অনেক আগেই গেছে। এখন উপাচার্য নিয়োগ হয় রাজনৈতিক আনুগত্য বিবেচনায়। যার মেরুদন্ড যত দুর্বল, তিনি তত যোগ্য। ফলে উপাচার্য পদটি তার শ্রদ্ধা, ভারিক্কি হারিয়েছে অনেক আগেই। উপাচার্যরা এখন হাসির পাত্র, আন্দোলনের লক্ষ্য। তবে খোন্দকার নাসিরউদ্দিন যেমন পদটিকে রকের মাস্তানের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন, এতটা আগে হয়নি। খোন্দকার নাসিরউদ্দিন বাথ্য হয়ে পদত্যাগ করেছেন, তবে দেশের আরো অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদ অনেক অযোগ্যরা আকড়ে আছেন। সবচেয়ে ভালো হয় কোনো আন্দোলনের আগেই যদি সেইসব অযোগ্য উপাচার্যরা সরে যান।

তবে তারচেয়ে জরুরী হলো, উপাচার্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক করা। আমি বিশ্বাস করি এখনও উপাচার্য হওয়ার মত যোগ্য, জ্ঞানী শিক্ষক আছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তারা আড়ালেই থাকেন। নিয়োগ পান রাজনৈতিকরা। সরকারের দায়িত্ব হলো যোগ্য মানুষদের খুজে বের করে উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া। উপাচার্যের পদটিকে আগের সম্মানের জা্য়গায় নেয়া হয়তো আর কখনোই সম্ভব নয়। তবে খোন্দকার নাসরিউদ্দিনের মত কেউ যেন আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে না পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রভাষ আমিন : বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ।

প্রভাষ আমিন ভিসি মত-দ্বিমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর