Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২ ঘণ্টার অপেক্ষায় ২ কেজি পেঁয়াজ, অনেকেই ফিরলেন শূন্য হাতে


১ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৪২

ঢাকা: রাজধানীর খোলাবাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ন্যায্যমূল্যের পেঁয়াজ কিনতে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) এক থেকে দুই ঘণ্টার অপেক্ষার সেই লম্বা সারিতে শ্রমিক-দিনমজুর ছাড়াও ছিলেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী আর গৃহিণীরা।

স্কুল-কলেজ ছুটির পর কেউ কেউ আবার সন্তানের হাত ধরেই শামিল হয়েছেন কেনাকাটার সেই লাইনে। অনেকেই অফিসের কর্মঘণ্টার কোনো এক ফাঁকে এসেছেন ন্যায্যমূল্যের পেঁয়াজ কিনতে। কিন্তু ক্রেতাদের ভিড় আর লম্বা লাইনে ধৈর্যহারা তারা।

বিজ্ঞাপন

ক্রেতাদের অভিযোগ, এত সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ২ কেজি পেঁয়াজ কেনা যথেষ্ট নয়। অন্তত ৫ কেজি পেঁয়াজ দেওয়া হলে ভালো হতো৷ অনেকই আবার দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর ফিরেছেন শূন্য হাতে।

রাজধানীতে খোলাবাজারে টিসিবির পেঁয়াজ বেচাকেনা  হচ্ছে এমন কয়েকটি এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

খামারবাড়ি মোড়ে রাখা টিসিবি পণ্যের ট্রাকে মিরপুর থেকে পেঁয়াজ কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী লিটন। তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনও পেঁয়াজ পাইনি। পেঁয়াজসহ ন্যায্যমূল্যে যা দেওয়া হয় সবই কিনব। কারণ বাজারের দামে এখন আর ওসব পণ্য কেনার সামর্থ্য নেই আমার। কষ্ট হলেও কিছু করার নেই।

বেসরকারি চাকরিজীবী ওয়াহিদুল আলম খান বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনও লাইনের সামনে অনেক মানুষ। কখন সিরিয়াল পাব জানি না। বাজারে পেঁয়াজের দাম লাগামছাড়া। কী করব? এখানে কষ্ট হলেও কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতাদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত ন্যায্যমূল্যের পেঁয়াজ পাবেন কিনা- এমন উৎকণ্ঠায় থাকতে দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

ইন্দিরা রোডের গৃহিনী আছমিতা। লাইনে অপেক্ষা করে পেঁয়াজ আর তেল কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজ কিনতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি তো পেলাম। কিন্তু এখনও যারা লাইনে আছে তারা তো পেঁয়াজ পাবেন না। কারণ যা এনেছিল তা বিক্রি শেষ।’

মনিপুরিপাড়ার আরেক গৃহীনি শামসুন্নাহার। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ পেয়েছি ২ কেজি। ৫ কেজি দিলে ভালো হতো। ২ কেজি তো কম। এত সময় নষ্ট করে ২ কেজি পেঁয়াজ কেনা অযৌক্তিক। কিন্তু কী করব?’

টিসিবির পণ্যের ট্রাকের দায়িত্বে থাকা বিক্রেতা সারাবাংলাকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ১ হাজার কেজি করে পেঁয়াজ দেওয়া হয়েছে বিক্রির জন্য। কিন্তু আজ ৪০০ কেজি পেঁয়াজ দিয়েছে। খামারবাড়ির মতো ব্যস্ত জায়গায় এমন সময়ে এত অল্প পেঁয়াজে হয়?’

দুপুর একটার দিকেই খামারবাড়িতে পেঁয়াজ বিক্রি শেষ হয়ে যায়। লাইনে থাকা অনেককেই তখন খালি হাতে ফেরত যেতে হয়েছে। এমনই একজন তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা মিজান। তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পেঁয়াজও শেষ হয়ে গেছে। খালি হাতে ফিরতে হবে ভেবে চিনি আর ডাল নিয়ে গেলাম।’

ফার্মগেটের একটি বেসরকারি অফিসের কর্মী শাহিদ। তিনি বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজ পাইনি।’

একই অভিযোগ করেন সংসদ ভবনের কর্মচারী মারুফা আক্তার, পোশাককর্মী সেলিনা আর বেসরকারি স্কুলশিক্ষক আলতাফ।

আরও পড়ুন:  রাজধানীর যে ৩৫ স্থানে বিক্রি হচ্ছে টিসিবি‘র পেঁয়াজ

এদিকে, সচিবালয়ের গেটে টিসিবির ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খোলা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর  ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। পেঁয়াজ কেনার জন্য লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া তেমন কোনো অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে না ক্রেতাদের।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রাশেদ জামান টিসিবির ট্রাকের সামনের লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনেছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খোলা বাজারে পেঁয়াজের দাম এত বেড়ে গেছে যে অনেক পরিবার পেঁয়াজ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। মাত্র ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রির এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। কারণ আমাদের মত মধ্যবিত্ত মানুষেরা এখন অন্তত পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।’

টিসিবি’র ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা ইউসুফ আহমেদ বলেন, ‘একশ টাকা দাম ছাড়িয়ে যাওয়ার পর আর পেঁয়াজ কিনিনি। আজকে এখানে লাইন দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। মাথাপিছু ২ কেজি পেঁয়াজ দিচ্ছে। এ দিয়ে এক সপ্তাহ চলে যাবে।’

টিসিবির বিক্রেতা মকবুল বলেন, ‘শুধু পেঁয়াজ নয়, টিসিবির ট্রাকে মশুর ডাল, চিনি, সয়াবিন তেলও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু  এসব পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজের চাহিদায় সবচেয়ে বেশি। এই এলাকায় এতো দীর্ঘ লাইন কখনোই হয় না। প্রতি কেজি চিনি ৫০ টাকা, মশুর ডাল ৫০ টাকা। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল ২ ও ৫ লিটার করে বিক্রি হচ্ছে ও পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’

টিসিবি’র টিমের বিক্রয় প্রতিনিধি সুলতান বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। এখানে ক্রেতাদের ভিড় অনেক বেশি। দুপুর পর্যন্ত আমরা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। পেঁয়াজের আজকের স্টক শেষ।  আবার আগামীকাল সকালে বিক্রি শুরু করব।’

ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে ন্যায্যমূল্যে টিসিবিতে পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। ঢাকা মহানগরীর ৩৫টি  এলাকায়  প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বেচাকেনা করছে টিসিবি।

টিসিবি নায্যমূল্য পেঁয়াজ

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর