আ. লীগের আগেই যুবলীগের কাউন্সিলের ইঙ্গিত
১ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:৫৩
ঢাকা: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন শেষে দেশে ফিরেই সম্প্রতি নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে ওঠা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলটির ২১তম জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা রয়েছে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনায় বসেন শেখ হাসিনা। এ সময় যুবলীগের ব্যাপারে এমন ইঙ্গিত দেন বলেই বৈঠকসূত্র জানায়। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে দলীয় নীতি-নির্ধারণী ফোরামে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করে সহযোগী সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। নভেম্বরের শেষ নাগাদ কাউন্সিল হতে পারে বলেই জানিয়েছে সূত্রটি।
মঙ্গলবার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশে ফিরলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। দলের পক্ষে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত নেতাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন শেখ হাসিনা।
পরে দলের দুই যুগ্ম-সাধাররণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান এবং দুই সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সাথে আলাদা করে কিছু সময় একান্তে কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি চলমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের ব্যাপার হার্ডলাইন মনোভাব ব্যক্ত করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, দেশে যে অভিযান শুরু হয়েছে, তা সফলভাবে শেষ করার জন্য কঠোর মনোভাব দেখান প্রধানমন্ত্রী। কথা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন করার ব্যাপারে ইঙ্গিত দেন দলীয় সভাপতি।
এ বিষয়ে জানতে উপস্থিত নেতাদের দুজনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মলেন করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করার নির্দেশনাও আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দলের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে একাধিক রাজনীতিক। এ বিষয়ে জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সময় নিউইয়র্কে অবস্থানকালে একটি ঘরোয়া আলাপচারিতায় কয়েকজনের সামনে আওয়ামী লীগ সভাপতি যুবলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেও অপর সূত্রে জানা গেছে।
জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যান প্রধানমন্ত্রী। টানা ৮ দিনের সফরে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলায় ভাষণ দেন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, উন্নয়নের জন্য অংশগ্রহণমূলক অর্থায়নবিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল অ্যাডভোকেট ডাচ রানী ম্যাক্সিমা ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের বিল গেটসসহ বেশকয়েকটি দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকসহ ব্যস্ত সময় পার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে বাংলাদেশে ফেরার আগে রোববার নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি কেউ অনিয়ম করে আমি ব্যবস্থা নেব- এমনকি তারা আমার দলের হলেও। যদি আমি দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিতে চাই। আমার ঘর থেকেই তা আগে শুরু করতে হবে।’
জনগণের জন্যই তাঁর রাজনীতি এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় এসেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘আমি সব সময় জনগণের মঙ্গলের কথাই চিন্তা করি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আমার দল এবং সমাজের ওপর ক্ষতিকর কোনো প্রভাব পড়ছে কিনা সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। আমাকে সেটা মোকাবিলাও করতে হবে। যে কারণে আমি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়মিত হলেও দলের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সম্মেলনজট লেগেই আছে। এরই মধ্যে সম্মেলনের পর কেটে গেছে সাতবছর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর অন্তর সম্মেলন হওয়ার কথা। সবশেষ ২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস হয়। সেটিও দীর্ঘ ৯ বছর পর। ষষ্ঠ এ কমিটির মেয়াদও ফুরিয়েছে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চলমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। গ্রেফতার এড়াতে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মুমিনুল হক সাঈদ। যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসসহ বেশ কয়েকজনের খোঁজে রয়েছে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়াও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জি কে শামীমকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। যদিও যুবলীগের দাবি জি কে শামীম দলের কেউ নন।