দুদকের হটলাইনে ২৫ মাসে সাড়ে ৩২ লাখ অভিযোগ
২ অক্টোবর ২০১৯ ২০:৫১
ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হটলাইন ১০৬ এ গত ২৫ মাসে প্রায় সাড়ে ৩২ লাখ অভিযোগ এসেছে। আর এই অভিযোগের বেশির ভাগই সরকারি সেবা সংস্থার বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই ১০৬ নম্বরে ‘টোল ফ্রি’ এই হটলাইন চালু করে দুদক। সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওই নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারেন নাগরিকরা। আর গত ২৫ মাসে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই হতে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইন-১০৬-এ ফোন কল এসেছে ৩২ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি। সেই হিসেবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাত হাজারের মতো অভিযোগ এসেছে। আর কমিশনের পাঁচজন কর্মকর্তা পালাক্রমে প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর সকাল ৯ থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে এসব ফোন কল রিসিভ করছেন। কমিশনের অভিযোগকেন্দ্রের সকল কার্যক্রম ডিজিটালি মনিটরিং করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে অনেক অভিযোগকারীই দুদক আইনের তফসিলভুক্ত দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের তফসিল বহির্ভূত অভিযোগ যেমন ব্যক্তিগত বিরোধ, যৌতুক, বিদ্যালয়ে পাঠদানে গাফলতি, পারিবরিক বিরোধ, সামাজিক সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ করে থাকেন। কমিশনের সুস্পষ্ট নির্দেশনার আলোকে এই কেন্দ্রের কর্মকর্তারা দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধসমূহ লিপিবদ্ধ করছেন পাশাপাশি তফসিল বহির্ভূত অপরাধের বিষয়ে অভিযোগকারীর করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
হটলাইনে আসা অভিযোগ প্রায় বেশির ভাগই সরকারি সেবা সংস্থার বিরুদ্ধে। তবে ভূমি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবহনখাতে সাধারণ মানুষ বেশি হয়রানির হচ্ছেন বলে অভিযোগ এসেছে। তবে অভিযোগ আসা প্রায় ৬০ ভাগ সরকারি সেবা সংস্থা, ১৯ ভাগ বেসরকারি ব্যক্তির অবৈধ সম্পদ এবং ২১ ভাগ দুদকের তফসিলের বাইরের অভিযোগ ফোনে এসেছে। যেসব সংস্থার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে সেগুলো হচ্ছে, ভূমি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিআরটিএ, তিতাস গ্যাস, ওয়াসা, রাজউক, বিমান, সিভিল এভিয়েশন, কাস্টমস, বিদ্যুৎ, কারাগার, এনবিআর, ডেসকো, জনশক্তি, বিআইডব্লিউটিএ, রেলওয়ে,পরিবহন, গণপূর্ত, সিটি করপোরেশন ও পাসপোর্ট অফিস।
আরও জানা গেছে, এ পর্যন্ত দুদকের হটলাইনে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম প্রায় সাড়ে ৬শর বেশি অভিযান পরিচালনা করেছে। হটলাইনে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নেমে দুদকের অভিযান টিমের সুপারিশে বেশকিছু অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি, হাতে নাতে ঘুষের টাকাসহ গ্রেফতার হয়েছেন প্রায় ৫০ জন দুর্নীতিবাজ। ২২ জনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ২১৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ২৬টি দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করা, ৫০টির বেশি অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, ৭৩ শতাংশ খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য সারাবাংলাকে বলেন, দুদকের প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস আছে বলেই এভাবে মানুষ কমিশনের হটলাইনে অভিযোগ জানাচ্ছে। এই হটলাইন এখন সাধারণ মানুষের অভিযোগ জানানোর একটি প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগের তুলনায় অভিযান কিংবা ব্যবস্থা নেওয়ার অনুপাত হার কম। তবে সরকারি কর্মচারীরা দুর্নীতির সঙ্গে যে জড়িত এটা নিয়ে সন্দেহের কিছু নেই। কারণ হটলাইনের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এটিই প্রমাণ করে দেশে দুর্নীতির যে ব্যাপকতা সেটার অন্যতম একটি সরকারিখাত। সুতরাং এখানে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। অন্যদিকে দুদক যে আরও বেশি সক্রিয় হতে কেননা বেশিরভাগ অভিযোগ যেহেতু সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি একটি আইন কার্যকর হলো সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের আগে সরকার পূর্বানুমতি লাগবে। এখানে দুদকের এক ধরনের ক্ষমতা খর্ব হয়েছে তাই এ বিষয়ে দুদকের উচিৎ সরকারের কাছে তাদের অবস্থান তুলে ধরা। অন্যদিকে সরকারেরও উচিৎ হবে এই পথ থেকে সরে আসা।’