Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাদ ছাড়া কেউ খুশি নন রংপুর উপনির্বাচনে


২ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:২৭

রংপুর: আগামী ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে রংপুরের এলাকায় এলাকায় এখন উৎসব আমেজ। প্রার্থীরা যাচ্ছেন ভোটাদের বাড়ি বাড়ি, চাইছেন ভোট-সমর্থন। জানতে চাচ্ছেন রংপুরাবাসীর সমস্যা-প্রত্যাশা, জানাচ্ছেন বিজয়ী হলে তাদের কর্মপরিকল্পনা।

বুধবার (২ অক্টোবর) সারাদিন নির্বাচনি মাঠে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাদ এরশাদ, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী রিটা রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ারকে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।

নির্বাচনি পরিবেশে সাদ এরশাদ সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও বাকি দুই প্রার্থীর অভিযোগের আঙুল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) দিকে।

যা বললেন প্রার্থীরা

সাদ এরশাদ বলেন, সুন্দর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। রোদ-বৃষ্টির মধ্যে আমরা কাজ করেছি। অনেক ভাই-বোনেরা আমার সঙ্গে আছেন, ভালোবাসা দেখিয়েছেন। আমিও তাদের সঙ্গে আছি। সবার সহযোগিতা আমি চাই। যারা আমার সঙ্গে থাকছেন, তাদের সঙ্গে নিয়ে আমি রংপুরবাসীর জন্য কাজ করে যাব। আমি চাই রংপুর রঙে রঙে ভরপুর হবে। রংপুরবাসীর ভালোবাসা নিয়ে আমি রংপুরকে সাজাতে চাই।

এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, আমি চাই সবাই জিতুক। কিন্তু এখানে হার-জিতের একটা জিনিস আছে। আমি সবার ভালো কামনা করি। সবাই যেন ভালো থাকে আমি এই দোয়া করি।

রিটা রহমান অভিযোগ করে বলেন, সম্পূর্ণ পরিষ্কারভাবে তারা (সরকার) নীতিমালা লঙ্ঘণ করছে। এটা করছে কারণ তারা প্রভাব খাটাবে। তারা সরকারে আছে, সরকারি সব ধরনের প্রভাব খাটাতে তারা আসছে। এই জন্য আমরা আরও শঙ্কিত। গণমাধ্যমের কাছে দাবি করি, আপনারা দেখবেন তারা কতটা ইন্টারফেয়ার করছে।

এদিন সকাল ১১টায় রংপুর জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে রিটা রহমানের নির্বাচন কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলা হয়, প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকার কথা থাকলেও সেটা নেই।

আসিফ শাহরিয়ার বলেন, এখানে জাতীয় পার্টির যিনি প্রার্থী, তিনিই বারবার নীতিমালা ভঙ্গ করার চেষ্টা করছেন। আজকেও তারা পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান এবং এমপিরা মিলে মিটিং করার চেষ্টা করেছেন। আমি মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছি। তারা ইচ্ছা করলেই নির্বাচনি এলাকার বাইরে গিয়ে মিটিং করতে পারেন, নিয়মও তাই। সব সময় তাদের ভেতরে আইন ভাঙার প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। রংপুরবাসী এটা খুব ভালোভাবে নিচ্ছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনি পরিবেশ ভালো আছে। রংপুরের মানুষ সব সময় শান্তিপ্রিয়। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হবে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতিও ভালো আছে। আমি আশা করছি, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে এবং রংপুরবাসী শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে যেতে পারবে।

আমি আস্থাশীল, গত কয়েকটা নির্বাচন থেকে আমার মনে হয়েছে, আমাদের ইলেকশানটা ভালো হবে। আমার ৭৮টি সংগঠন আছে। সংগঠনগুলোর মধ্য দিয়ে আমি অনেকগুলো জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। এলাকাটা অনেক বড়। এ রকম জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। আর সেটা তেমন প্রভাবও ফেলে না— বলেন আসিফ শাহরিয়ার।

রংপুর-৩ আসন শূন্য ঘোষণা

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর এই আসনে উপনির্বাচনের জন্য ৫ অক্টোবর তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয়েছে এরশাদপুত্র সাদ এরশাদকে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরে দাঁড়ানোয় এই আসনে এখন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মিলে মহাজোট হিসেবেই নির্বাচন করবে সংসদের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল। আর এই আসনে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের (এনপিপিবি) চেয়ারম্যান রিটা রহমানকে। এই দু’জনের মধ্যেই এখন এই উপনির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এছাড়া এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ জুলাই এইচ এম এরশাদ মারা যান। এরপর ১৬ জুলাই সংসদ সচিবালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) আ.ই.ম গোলাম কিবরিয়া আসনটি শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশ করেন।

সংবিধানের ১২৩(৪) দফায় বলা হয়েছে— ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো সদস্যপদ শূন্য হলে নব্বই দিনের মধ্যে পদটি পূর্ণ করার জন্য আইনি বাধ্যবাধতা রয়েছে।’

রংপুর-৩ আসনে ১৭৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪২ হাজার ৭২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৩১০ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৭৬২ জন।

গত ১ সেপ্টেম্বর দুপুরে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ তারিখ ছিল ৯ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৬ সেপ্টেম্বর। রংপুর-৩ আসনে ভোট হবে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত।

৫ অক্টোবর সাধারণ ছুটি

ওই দিন নির্বাচন উপলক্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রংপুর-৩ নির্বাচনি এলাকার শূন্য আসনে নির্বাচন উপলক্ষে ৫ অক্টোবর সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে নির্বাচনি এলাকায় ওই দিন যদি কোনো পাবলিক পরীক্ষা হওয়ার দিন ঠিক থাকে তাহলে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো সাধারণ ছুটির আওতা মুক্ত থাকবে।

আওয়ামী লীগ আসিফ শাহরিয়ার এনপিপিবি জাতীয় পার্টি জাপা বিএনপি রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচন রিটা রহমান সাদ এরশাদ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর