দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব
৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৯:৫৪
ঢাকা: বছরব্যাপী অপেক্ষার পালা শেষ করে শারদোৎসবের আগমনী সুর এখন বাঙালি সনাতন সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন ও বিশ্বব্যাপী অবারিত মঙ্গলধ্বনি বয়ে যাক, দেবী দুর্গা এমন বার্তা নিয়েই ঘোড়ায় চড়ে আসছেন লোকালয়ে। আর তাই দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় মাতোয়ারা ভক্তকূল। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, কোনো কিছুতেই যেনো কমতি না থাকে সেই নিয়ে ব্যস্ত প্রতিটি পূজা মণ্ডপ।
আর এমন সাজ সাজ রবের মধ্য দিয়েই বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) পঞ্চমীর সন্ধ্যায় হবে দেবীর বোধন। বোধন শেষে শুক্রবার থেকে ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়েই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক দুর্গাপূজা।
বোধন শব্দের অর্থ চৈতন্যপ্রাপ্ত বা জাগরণ। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অন্যতম আচার। সাধারণত শুক্লাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধন হয়ে থাকে। তবে এবার তিথি অনুযায়ী পঞ্চমীতেই বোধন হবে। পুরাণ অনুসারে, শরতকালে ভগবান রামচন্দ্র দুর্গাপূজা করেন রাক্ষসরাজ রাবণকে বধের উদ্দেশ্যে। তখন তিনি অকালে বোধন করেন বলে এটিকে অকালবোধনও বলা হয়ে থাকে। শরৎকালের দুর্গাপূজায় এই বোধন করার বিধান থাকলেও বসন্তে অর্থাৎ চৈত্র মাসে যে বাসন্তীপূজা হয় তাতে বোধনের প্রয়োজন হয় না।
‘রাজধানীর পূজা মণ্ডপগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে’
মূলত অকালবোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে-মন্দিরে সন্ধ্যায় করা হবে বন্দনাপূজা করা হবে। আর এই পূজার পরেই শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ষষ্ঠী তিথি থেকে তীর-ধনুক, চক্র-গদা, খড়গ-কৃপাণ, কল্যাণ ও ত্রিশুল হাতে শক্তিরূপী দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধে স্থান নেবেন মণ্ডপে-মন্দিরে। দশহস্তে অস্ত্রে সজ্জিত ত্রিনয়ণী দেবী দুর্গার অতল স্নিগ্ধ চোখের পলক খুলে যাবে ও জেগে উঠবেন দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দশভূজা দেবী দুর্গা। শুরু হবে বাঙালি হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব।
‘রোহিঙ্গা-এনআরসি মাথায় রেখে চট্টগ্রামে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা’
ষষ্ঠীতে কল্পারম্ভ এবং দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস শেষে মাতৃরূপে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে ঠাই করে নেবেন বিশ্বব্যাপী মঙ্গল ধ্বনি দিয়ে কৈলাশ ছেড়ে মর্ত্যে আসা মা দুর্গা। মূলতঃ দুর্গাপূজা হয় আশ্বিনের শুক্লা ষষ্ঠী থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত।
এ সময় ভক্তরা মেতে উঠবে আরাধনায়, ঢাকে পড়বে কাঠি আর ধূপের ধোঁয়া ও ঢাক-ঢোলের সঙ্গে দেবী দুর্গার ভক্তিতে সরব হয়ে উঠবে পূজা মণ্ডপ। চলবে বিসর্জনের আগ পর্যন্ত। ৫ দিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের দশমী এবার মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর)।
রাজধানীসহ সারাদেশেই বিভিন্ন সার্বজনীন পূজা মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মূর্তি কারিগররা প্রতিমার অবয়ব গড়ার কাজ আগে শেষ করে ফেললেও এখন শেষ সময়ে তারা ব্যস্ত তুলির আঁচড়ে মা দুর্গাকে উদ্ভাসিত করে তোলার কাজে। বোধনের আগেই শেষ হবে শেষ তুলির আঁচড়, পড়ানো হবে প্রয়োজনীয় অলংকার। নিপুন শিল্পকর্মে শুধু মা দুর্গাই নয়, জেগে উঠবেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, গনেশ, কার্তিক সহ অন্যানু দেবতারাও।
পূজা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন থিম নিয়ে শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত বিশাল বিশাল প্যান্ডেলের কাজে থাকা কারিগররাও। কাজের দক্ষতা দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের পাশাপাশি ডেকোরেটররা এখন ব্যস্ত আলোকসজ্জা নিয়েও।
ভক্তরাও বসে নেই। বাঙ্গালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে চলছে মুড়ি, নাড়ু, মিষ্টি বানানোর ধুম। প্রতিটি বাড়িতেই উৎসবের আবহ যেনো দশভূজা মাকে বরণ করে নিতে না থাকে কোনো কমতি। আশীর্বাদ নিবেন মায়ের যেনো পৃথিবী হয়ে ওঠে শান্তিময়। পাঁচদিন ব্যাপী এই উৎসব শেষে দেবীদুর্গা যখন ঘোড়ায় চড়ে বিদায় নেবেন মর্ত্য থেকে তখন ভক্তকূল বিসর্জনের মাধ্যমে দুর্গতিনাশিনীকে শ্রদ্ধাভরে এগিয়ে দিবেন কৈলাশের পথে আর বলবেন, ‘ আসছে বছর, আবার হবে।’
ছবি: শ্যামল নন্দী, চট্টগ্রাম ব্যুরো