‘রাত থেকেই কল ধরছিল না আবরার’
৭ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৪৮
কুষ্টিয়া: ঢাকায় নিহত বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আদরের ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা ছালেহা খাতুন। এই অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না প্রতিবেশীরাও। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকেই আবরারের বাড়ি সামনে স্বজন এবং প্রতিবেশীদের ভিড় দেখা যায়।
https://youtu.be/KCHuEZ8gvWg
আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ বলেন, আমরা খবর পাই আজ সকালে। কাল রাতে থেকে অনেকবার ফোন করা হয়। কিন্তু ভাইয়া ফোন ধরছিল না, সে কারণে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। সকালে ভাইয়ার হলের রুমমেট ফোন করে বলেন ফাহাদ— ‘অসুস্থ, ঢাকায় কেউ থাকলে আসতে বলেন।’ একটু পরেই আবার ফোন করে বলেন ‘ফাহাদ আর নেই, এটা জানাতে চাচ্ছিলাম।’ তখন তো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, পরে ঢাকায় আমাদের আত্মীয়রা গিয়ে নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন: শরীরে বাঁশ-স্ট্যাম্পের আঘাত, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মৃত্যু
ভাইয়া সব সময় পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। কারো সাথেই মিশতো না। মুসলমান হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। রাজনৈতিক কোনো দল, জামায়াত-শিবির, ইসলামিক উগ্রবাদী কোনো সংগঠনের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না ভাইয়ার। ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে যে এই হত্যাকাণ্ড হয়নি সেটা তো বলাই যায়। এখন চাওয়া একটাই, আশা করছি এর সুষ্ঠু বিচার আমরা পাব— বলেন ফাইয়াজ।
আরও পড়ুন: বুয়েটের আবাসিক হলে শিক্ষার্থীর মৃতদেহ, শরীরে আঘাতের চিহ্ন
আবরারের খালা বলেন, এমন ছেলে এখন আর পাওয়া যায় না। জোরে কথাও বলতো না। মা ছাড়া কিছু বুঝতো না, মা মুখে তুলে খাইয়ে দিতো। বাড়ি আসলে নামাজ পড়তো আর ঘরেই থাকতো। ছোটবেলা থেকে খুবই ট্যালেন্ট। আমরা কোনো কিছু চাই না, শুধু বিচার চাই। এখন যে যুগ, এই যুগে এত ভালো ছেলে হয় না।
প্রতিবেশী বলেন, আমি এখানে প্রায় ১০ বছর বসবাস করছি। আমার পরেই এরা বাড়ি করে। এই দুই ছেলে— আমার মনে হয় লাখে একটা। আমার মনে হয় না তারা কোনো দলের সাথে সম্পৃক্ত। আমরা সে রকম কর্মকাণ্ড কখনো দেখিনি। গত পরশুদিনও আমি আবরারের সাথে নামাজ পড়ি। এই পাড়ায় তাদের অনেকে চেনেই না। তারা শুধু পড়ালেখা নিয়েই থাকে। হঠাৎ আজ সকালে শোনার পরে আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি ছেলেটাকে কেউ মেরে ফেলতে পারে। আমরা আমাদের সন্তানকে লেখাপড়া করতে দিয়ে তারা লাশ হয়ে আসবে সেটা আশা করি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আবেদন থাকবে আমাদের সন্তানরা পড়তে গিয়ে যেন লাশ হয়ে না আসে সেই ব্যবস্থা তিনি করবেন।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ নেতার রুমে জেরা, সিঁড়িতে লাশ
আবরার ফাহাদ শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে। বাবা বরককউল্লাহ ব্রাকের কর্মকর্তা ছিলেন।
এদিন ভোরে শেরেবাংলা হল থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন জানান, ভোরে সংবাদ পেয়ে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের উত্তর ব্লকের ২য় তলার সিঁড়ি থেকে ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাতের কোনো এক সময় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখেছে কেউ। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।