আবরার হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জড়িত, স্বীকার বুয়েট সভাপতির
৭ অক্টোবর ২০১৯ ১৮:৪০
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামিউশ সানি।
তিনি বলেন, আবরার হত্যায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (৭ অক্টোবর) আবরারের মরদেহ উদ্ধারের পর তার হত্যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন- শরীরে বাঁশ-স্টাম্পের আঘাত, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মৃত্যু
এদিন ভোর ৪টার দিকে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ির নিচ থেকে আবরারের নিথর দেহ উদ্ধার করেন শিক্ষার্থীরা। চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার থাকতেন শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুমে। হলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরারকে ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।
আরও পড়ুন- ‘রাত থেকেই কল ধরছিল না আবরার’
শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামিউশ সানি বলেন, ‘কয়েকজন তাকে ওই রুমে (বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুম) ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করা হয়েছে বলে শুনেছি। যারা মারধরে জড়িত, তারা সবাই ছাত্রলীগের পদধারী নেতা।’
জামিউশ সানি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন একটি ঘটনায় ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত থাকতে পারে, এটা খুবই ন্যাক্কারজনক। এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে ছাত্রলীগের ছেলে হিসেবে নয়, অপরাধী যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এসময় আবরারের পরিবারের প্রতিও গভীর শোক জানান তিনি।
আরও পড়ুন- ছাত্রলীগ নেতার রুমে জেরা, সিঁড়িতে লাশ
আবরারকে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ৯ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন— বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন এবং ছাত্রলীগ নেতা রবিন, মুন্না, তানভীরুল আরেফিন ইথান, অমিত সাহা ও আল জামি।
এছাড়া, শেরেবাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর রুমে আবরারকে পেটানো হয়, সেই রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী তিন ছাত্রলীগ নেতা পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন— বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত সাহা, উপদফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুজতাবা রাফিদ এবং সমাজসেবা বিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতি মোশারফ সকাল।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ও এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এ ঘটনা ‘তদন্ত’ করতে কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ। তিনি বলেন, আবরার হত্যায় ছাত্রলীগের কেউ বিন্দুমাত্র জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেন, ভিন্নমতের জন্য একজন মানুষকে মেরে ফেলার কোনো অধিকার কারও নেই। কাজেই এখানে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তদন্ত চলছে, তদন্তে যারাই দোষী প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবরার হত্যা আবরার হত্যাকাণ্ড খন্দকার জামিউশ সানি ছাত্রলীগ বুয়েট ছাত্রলীগ বুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি