হত্যার ফুটেজ চান শিক্ষার্থীরা, বুয়েটে ২ পুলিশ কর্মকর্তা অবরুদ্ধ
৭ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:৪৯
ঢাকা: বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ সিসিটিভি ফুটেজের দাবিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত দুই কমিশনারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আবরার হত্যাকাণ্ডের ফুটেজ পুলিশ আলামত হিসেবে জব্দ করেছে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবি, ওই ভিডিও ফুটেজ তারা দেখতে চান। শিক্ষার্থীদের শঙ্কা, আলামত হিসেবে জব্দ হওয়া ভিডিও ফুটেজ বেহাত হয়ে গেলে আবরার হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগের নেতারা পার পেয়ে যেতে পারেন।
কিন্তু পুলিশ বলছে, তাদের কাছে ওই ভিডিও ফুটেজের কোনো সফট কপি আপাতত নেই। এই কারণে এখন ফুটেজ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা পুলিশ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এ সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন লালবাগ জোনের উপ-কমিশনার মুনতাসির রহমান রনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি ঘটনার তদন্ত করতে। আমাদের আটকাচ্ছেন কেন? আমাদের যেতে দিন।’
জবাবে সমস্বরে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ ছাড়া কাউকে যেতে দেওয়া হবে না। সকাল থেকে কেন আমাদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে?
সোমবার (৭ অক্টোবর) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় আবরার হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় ৯ জনকে আটক করার তথ্য জানিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্য অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিং শেষ করে বের হতে চাইলে পুলিশের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শেরেবাংলা হল অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা প্রটোকলের সদস্যরা ওই দুই কর্মকর্তাকে হল অফিস থেকে বের করে আনতে চাইলে তারাও শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। প্রটোকলের সদস্যরা লাঠিচার্জ করে ভেতরে থাকা কর্মকর্তাদের বের করে আনার চেষ্টা করেন। কয়েকশ পুলিশ সদস্য হুইসেল বাজিয়ে লাঠিচার্জ করে হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের সামনে আসার চেষ্টা করেন।
তখন শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশ সদস্যদের হলের বাইরে বের করে দেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ও আব্দুল বাতেন অবরুদ্ধ আছেন।
পুলিশ বলছে তাদের কাছে আপাতত ভিডিও ফুটেজের কোনো সফট কপি নেই। তারা সিসিটিভির হার্ডডিস্ক তাদের অফিসে নিয়ে গেছেন। এদিকে শিক্ষার্থীরা ভিডিও ফুটেজ ছাড়া পুলিশ ও হল প্রাধ্যক্ষকে বের হতে দিচ্ছে না।
শিক্ষার্থীরা অফিসের বাইরে এখন আবার অবস্থান করেছে ভিডিও ফুটেজের দাবিতে। অন্যথায় কাউকে বের হতে দেবে না বলে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন
এর আগে ব্রিফিংয়ে কৃষ্ণপদ রায় জানান, আবরার হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ যাচাই ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য আমলে নিয়ে ছাত্রলীগের ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
আটকেরা হলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ছাত্রলীগ নেতা রবিন, মুন্না, তানভীরুল আরেফিন ইথান, অমিত সাহা, আল জামি।
সোমবার (৭ অক্টোবর) ভোর চারটার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের উত্তর ব্লকের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আবরার বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের মুক্তিযোদ্ধা রোডে। বাবার নাম বরকত উল্লাহ।
আরও পড়ুন
আবরার হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জড়িত, স্বীকার বুয়েট সভাপতির
বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যায় ছাত্রলীগের ৯ নেতা আটক
বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
আবরারের জন্য সহপাঠীদের কান্না, দুপুর অবদি বুয়েটে আসেননি উপাচার্য
বুয়েটের আবাসিক হলে শিক্ষার্থীর মৃতদেহ, শরীরে আঘাতের চিহ্ন