‘ছেলেকে তো ফিরে পাব না, হত্যার বিচার যেন পাই’
৭ অক্টোবর ২০১৯ ২১:৩৯
ঢাকা: আর কোনো মেধাবী শিক্ষার্থীর অকালমৃত্যু চান না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন, সরকার যেন এ বিষয়ে নজর দেয়।
সোমবার (৭ অক্টোবর) রাত ৯টার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে ছেলে আবরারের মরদেহ নিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বরকত উল্লাহ বলেন, আমার ছেলে (আবরার ফাহাদ) কোনোদিন কোনো সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না। কখনো খারাপ কিছু করেনি। আমাদের কুষ্টিয়ায় (আবরারের গ্রামের বাড়ি) সবাই তাকে একনামে ভালো ছাত্র হিসেবেই চিনত। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাই, আর কোনো মেধাবী ছাত্রের যেন এমন অকালমৃত্যু না ঘটে।
অবরারের বাবা বলেন, আমার ছেলে হত্যায় জড়িতদের ফাঁসি চাই। ভিডিও ফুটেজে যারা আছে সবাই এর সঙ্গে জড়িত। এদের কেউ ডাকেছে, কেউ মেরেছে।
তিনি বলেন, হত্যার সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত আছে। পুলিশ যেন তাদের গ্রেফতার করে। পুলিশ যদি ইচ্ছা করে সব কিছু করতে পারে। সব জায়গা থেকে আসামি ধরতে পারে। পুলিশকে আহবান জানাই সবাইকে যেন আটক করা হয়।
বুয়েট কর্তৃপক্ষের কোন সহযোগিতা পেয়ছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে বরকতউল্লা বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিসি ছিল না। এ পর্যন্ত হলে আসে নাই। প্রভোস্ট ছিল। কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাই।
এদিন ভোর ৪টার দিকে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ির নিচ থেকে আবরারের নিথর দেহ উদ্ধার করেন শিক্ষার্থীরা। চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আবরার থাকতেন শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুমে। হলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরারকে ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।
ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে বরকত উল্লাহ বলেন, ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। এখন একটাই চাওয়া— সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত যেন আমার ছেলে হত্যার বিচার পাই।
আবরারকে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ৯ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন— বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন এবং ছাত্রলীগ নেতা রবিন, মুন্না, তানভীরুল আরেফিন ইথান, অমিত সাহা ও আল জামি।
এছাড়া, শেরেবাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর রুমে আবরারকে পেটানো হয়, সেই রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী তিন ছাত্রলীগ নেতা পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন— বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত সাহা, উপদফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুজতাবা রাফিদ এবং সমাজসেবা বিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতি মোশারফ সকাল।
এ ঘটনায় পুলিশের তৎপরতা নিয়ে জানতে চাইলে আবরারের বাবা বলেন, এখন পর্যন্ত পুলিশ যতটুকু করেছে, তাতে আমি বলব, আমরা সহযোগিতা পেয়েছি। তবে এখনো এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অনেককেই পুলিশ ধরতে পারেনি। পুলিশ যদি চায়, তারা যে কাউকে ধরতে পারবে। আমেরিকায় থাকুক আর যেখানেই থাকুক, পুলিশ চাইলে যেকোনো জায়গা থেকেই তাদের ধরতে পারবে। আমি পুলিশের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসে।
আবরারের বাবা জানান, আবরার হত্যার ঘটনা জানার পর থেকে এখন পর্যন্ত বুয়েট উপাচার্য তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তিনি বলেন, সকালে শেরে বাংলা হলের (আবরারের হল) প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থলেই আছেন। কিন্তু উপাচার্য স্যার আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি, তার সঙ্গে দেখা হয়নি। উপাচার্য স্যার হলেও যাননি।
এরই মধ্যে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামিউশ সানি স্বীকার করেছেন, বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এতে জড়িত রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ও এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এ ঘটনা ‘তদন্ত’ করতে কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ। তিনি বলেন, আবরার হত্যায় ছাত্রলীগের কেউ বিন্দুমাত্র জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন-
বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যায় ছাত্রলীগের ৯ নেতা আটক
বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বুয়েটের আবাসিক হলে শিক্ষার্থীর মৃতদেহ, শরীরে আঘাতের চিহ্ন
আবরার হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জড়িত, স্বীকার বুয়েট সভাপতির
আবরারের জন্য সহপাঠীদের কান্না, দুপুর অবদি বুয়েটে আসেননি উপাচার্য
অকালমৃত্যু আবরার হত্যা আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ মেধাবী শিক্ষার্থী