Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আবরারের মৃত্যুতে উত্তাল বুয়েট ক্যাম্পাস, আজও দেখা নেই ভিসির


৮ অক্টোবর ২০১৯ ১৫:৩০

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নিজের হলেই পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় উত্তাল গোটা বুয়েট ক্যাম্পাস। রাজধানীসহ সারাদেশেই এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলছে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ। তবে আবরারকে হত্যার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত দেখা নেই বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের। আবরারের মরদেহ দেখার জন্য একবারের জন্যও আসেননি বুয়েট ক্যাম্পাসে কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে। আবরারের মরদেহ মর্গ থেকে এনে বুয়েট ক্যাম্পাসে জানাজা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানেও উপস্থিত ছিলেন না উপাচার্য।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বুয়েট শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। সেখানে তারা আলটিমেটাম দিয়েছেন, বিকেল ৫টার মধ্যে উপাচার্য ক্যাম্পাসে এসে তাদের সঙ্গে দেখা না করলে তারা আগামীকাল বুধবার (৯ অক্টোবর) থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেবেন।

আরও পড়ুন- আববার হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১০ আসামি পাঁচ দিনের রিমান্ডে

রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আবরারকে তার শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুম থেকে ডেকে নেন। বুয়েট শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওই হলেরই ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে আবরারকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন, পেটান। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাও আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য স্বীকার করেছেন। পরে সোমবার (৭ অক্টোবর) ভোর ৪টার দিকে আবরারের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয় হলের সিঁড়ি থেকে।

পরে আবরারের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ঢামেক মর্গে। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মরদেহ আনা হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে। সেখানে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে রাত পৌনে ১০টার দিকে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে একবারের জন্যও ক্যাম্পাসে আসেননি উপাচার্য ড. সাইফুল।

আরও পড়ুন- ‘বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকার প্রয়োজন নেই’

কেবল আবরারকে দেখতে আসাই নয়, আবরারের পরিবারের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করেননি বুয়েট উপাচার্য। সোমবার রাতে ঢামেক মর্গে ছেলের মরদেহ নিতে আসা বরকত উল্লাহও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর একবারের জন্যও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক।

এমন একটি ঘটনায় যখন সারাদেশ উত্তাল, তখন গণমাধ্যমকর্মীরাও উপাচার্য ড. সাইফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সোমবার বিভিন্ন সময় এই প্রতিবেদকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা উপাচার্যের মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মঙ্গলবার সকাল থেকেও একাধিকবার তার মোবাইল নম্বরে কল করা হয়। কখনো সেই নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে, কখনো কল ঢুকলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- চিরনিদ্রায় শায়িত আবরার, জানাজায় হাজার মানুষের ঢল

বুয়েট উপাচার্যের খোঁজ নিতে যাওয়া হয় তার কার্যালয়ে। সেখানকার নিরাপত্তা প্রহরী জানান, পূজার ছুটি থাকায় স্যার (উপাচার্য) গত দুই দিন ক্যাম্পাসে আসেননি। উপাচার্যের কার্যালয়ের পাশের ভবনের আরেক নিরাপত্তা প্রহরী জানান, গত দুই দিন ধরে তিনি উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে দেখেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার জন্য বরাদ্দ বাসভবনেও অবস্থান করছেন না। নিরাপত্তা প্রহরীদের কেউ কেউ জানান, ভিসি বর্তমানে লালবাগে রয়েছেন।

এদিকে, আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে বুয়েট শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সকালে। ওই মিছিল থেকে তারা ঘোষণা দেন, বিকেল ৫টার মধ্যে উপাচার্য সাইফুল ইসলাম ক্যাম্পাসে না এলে তারা বুধবার থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেবেন।

বিক্ষোভ মিছিল থেকে সাত দফা দাবিও উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এসব দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা বুয়েটের আগামী ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলছেন, রোববার রাত ৮টার দিকে আবরারকে তার রুম থেকে ডেকে নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাত-আট জন নেতা। তারা আবরারের মোবাইল থেকে তার মেসেঞ্জার ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন, তিনি শিবির করতেন কি না। একপর্যায়ে তাকে পেটানো হয়। দফায় দফায় পেটানোর পর আবরার নিস্তেজ হয়ে এলে তাকে সিঁড়িতে ফেলে যান হত্যাকারীরা।

উল্লেখ্য, বুয়েটের উপাচার্য সাইফুল ইসলাম বুয়েটের ১৩তম উপাচার্য। তিনি বুয়েট থেকে যথাক্রমে ১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ১৯৮৬ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

আরও পড়ুন-

‘ছেলেকে তো ফিরে পাব না, হত্যার বিচার যেন পাই’

বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যায় ছাত্রলীগের ৯ নেতা আটক

শরীরে বাঁশ-স্টাম্পের আঘাত, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মৃত্যু

আবরার হত্যা: বুয়েট ছাত্রলীগের ১১ নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কার

বুয়েটের আবাসিক হলে শিক্ষার্থীর মৃতদেহ, শরীরে আঘাতের চিহ্ন

হত্যার ফুটেজ চান শিক্ষার্থীরা, বুয়েটে  ২ পুলিশ কর্মকর্তা অবরুদ্ধ

আবরার হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জড়িত, স্বীকার বুয়েট সভাপতির

আবরারের জন্য সহপাঠীদের কান্না, দুপুর অবদি বুয়েটে আসেননি উপাচার্য

আবরার হত্যা উপাচার্য উপাচার্য ড. সাইফুল ইসলাম বুয়েট বুয়েট উপাচার্য সাইফুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর