ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পরোয়ানা, দুই পক্ষের আইনজীবীর ভিন্নমত
৯ অক্টোবর ২০১৯ ২১:৫৩
ঢাকা: ট্রেড ইউনিয়নের কাজে বাধা দেওয়া ও কর্মীদের পাওনা পরিশোধ না করার অভিযোগের মামলায় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। আগামী ৩০ অক্টোবর তাকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন। যদিও বিষয়টি নাকচ করে ড. ইউনূসের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাজু আহমেদ সারাবাংলাকে জানান , ড.ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়নি, তাকে ৩০ অক্টোবর হাজির হতে বলেছেন আদালত।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সারাবাংলাকে এই দুই আইনজীবী ড.মুহম্মদ ইউনূসের গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে দুই ধরণের তথ্য দেন।
ড, ইউনূসের আইনজীবী রাজু আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ড. ইউনূস আজ হাজির না হওয়ায় শুনানিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার কথা জানান শুনানিতে । কিন্তু আমরা আদালতকে বলেছি, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি জরুরি কাজে বিদেশে আছেন। দেশে এলেই তিনি অবশ্যই আদালতে হাজির হবেন। পরে আদালত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। ওই দিন হাজির না হলে আদালত পরবর্তী আদেশ দেবেন।
তিনি বলেন, এ মামলার অপর দুই আসামি ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনীন সুলতানা ও উপ-মহাব্যবস্থাপক খন্দকার আবু আবেদীনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
ড. ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করায় ওই ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগে আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। তাদের আইনজীবী মহিউদ্দিন জানান, আদালত মৌখিক আদেশে গ্রেফতারি পরোয়ানার কথা বলেছেন বলেই আমি শুনেছি। কিন্তু আসামীপক্ষের আইনজীবীর এ নিয়ে ভিন্নমত আছে জানালে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আসি লিখিত আদেশ দেখিনি। কাল দেখে জানাতে পারব।
ওই মামলার শুনানি নিয়ে গত ১০ জুলাই ঢাকার আদালত প্রথমে সমন জারি করেন। এরপর ৮ অক্টোবর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির হতে বলা হয়। কিন্তু আট অক্টোবর পূজার বন্ধ থাকায় আজ বুধবার মামলাটির শুনানি হয়।শুনানি শেষে দুইজনের জামিন মঞ্জুর করেন ও ড. ইউনূসকে ৩০ অক্টোবর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন গঠন করায় চাকরিচ্যুতের অভিযোগে গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের তিন কর্মচারি এমরানুল হক, শাহ্ আলম ও আব্দুস সালাম গত ৩ জুলাই ড. ইউনূসসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার শুনানি নিয়ে গত ১০ জুলাই ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত সমন জারি করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মামলার বাদীরা গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের স্থায়ী পদে এমআইএস অফিসার (কম্পিউটার অপারেটর) হিসেবে কাজে যোগদান করেন। শ্রমিক হিসেবে নিজেদের সংগঠিত হওয়া ও নিজেদের কল্যাণের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিষয়ে সিদ্বান্ত গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী নিজেরাসহ অন্যান্য শ্রমিক সহকর্মীদের নিয়ে ‘গ্রামীণ কমিউনিকেশনস শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’ (প্রস্তাবিত) নামে একটি ইউনিয়ন গঠন করেন এবং তা আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেন। ইউনিয়ন গঠনের বিষয়টি জানতে পেরে মামলার আসামিরা তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকেন। স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনেও তারা বাধা দেয়।
বাদীর প্রতি এরকম অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করায় প্রকাশ্যে নানা ধরনের হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন আসামিরা। আসামিদের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বেআইনিভাবে বাদীদের প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখেন এবং কোনো কারণ ছাড়াই বাদীদের চাকরি থেকে টার্মিনেট করেন।
বিষয়টি লিখিতভাবে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালকে অবগত করেন বাদীরা। পরবর্তীতে কাজের বিষয় বহুবার যোগাযোগ ও অনুনয়-বিনয় করলেও তাদের (বাদীদের) প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুধু ইউনিয়ন গঠন করার কারণে আসামিরা তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়ে কাজ থেকে বিরত রাখেন এবং বেআইনিভাবে চাকরিচ্যূত করেন।
বেআইনিভাবে চাকরিচ্যূতির অভিযোগে গত ২৩ জুন বিবাদীদের বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান তারা। তার কোনো জবাব না পেয়ে পরে মামলা দায়ের করেন।