আবরারকে নিয়ে তসলিমার ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রতিক্রিয়া
১০ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৩১
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নিহত বুয়েটছাত্র আবরারকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি তার স্ট্যাটাসে বলেছেন- তার বিশ্বাস আবরারকে মেরে ফেলার জন্য পেটানো হয়নি। এছাড়া, আবরারের চাল-চলন শিবিরের মতো বলেও ধারণা তসলিমার।
তসলিমা নাসরিন তার ওই লেখায় ধর্মবিশ্বাস ও বিজ্ঞানের মধ্যে বিভেদ রেখা টেনেছেন। আবরার নামাজ পড়ুয়া ছিল সে বিষয় উল্লেখ করে তসলিমা বলেন, মেধাবী হওয়াটা নিশ্চয়ই গুণ কিন্তু ২১ বছর বয়সে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়াটা তো গুণ নয়, বরং দোষ।
তবে স্ট্যাটাসটিতে মন্তব্যকারী অনেকে তসলিমার সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন ফেসবুক পোস্টটিতে ‘প্রচ্ছন্নভাবে ধর্মবিদ্বেষ আছে এবং হত্যাকারীর প্রতি মমতা আছে।’
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের দিনে তসলিমা নাসরিনের এই স্ট্যাটাসে তার ‘মানসিক সমস্যা’ স্পষ্ট করেছেন বলেও কেউ কেউ খোঁচা দিয়েছেন প্রতিক্রিয়ায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্র হাসান আল মাহমুদ বলেন, তসলিমা নাসরিনের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাকে দেশে এসে (এনে) চিকিৎসা দেওয়া হোক।
নাজমুল আহসান নামে এক ফেসবুকব্যবহারকারী লেখেন, তসলিমা নাসরিনের স্পর্ধা সীমা ছাড়িয়েছে। এতটা জঘন্য হয় কী করে মানুষ! এখন ভায়োলেন্স পর্যন্ত জাস্টিফাই করছেন, ভিকটিম ব্লেমিং করছেন, তাও সিম্পলি ভিকটিমের রিলিজিয়াস বিলিভের কারণে। এগুলো নিয়ে কথা বলার সময় এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) তসলিমা নাসরিনের ভেরিফাইড ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া ওই স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো। তিনি আবরারকে ভুলভাবে ‘আরবাব’ নামে সম্মোধন করেছেন। শুধুমাত্র বানানটি সংশোধন করা হয়েছে।
তসলিমা লেখেন,
‘আবরার ফাহাদের গুণের বর্ণনা করতে গিয়ে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া পড়শি, চেনা পরিচিত সবাই বলছেন আবরার মেধাবী ছিল এবং আবরার ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। মেধাবী হওয়াটা নিশ্চয়ই গুণ কিন্তু ২১ বছর বয়সে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়াটা তো গুণ নয়, বরং দোষ। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি , বিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই! সাত আকাশের ওপর এক সর্বশক্তিমান বসে আছে, সে ছ’দিনে আসমান জমিন বানিয়েছে, আদম হাওয়াকেও মাটি দিয়ে বানিয়েছে, কথা শোনেনি বলে জমিনে ফেলে দিয়েছে, কেউ একজন ডানাওয়ালা ঘোড়ায় চড়ে তাকে এবং তার বানানো স্বর্গ নরক দেখে এসেছে — এসব আজগুবি অবিজ্ঞান আর হাস্যকর গাল গপ্প কোনও বুদ্ধিমান কেউ বিশ্বাস করতে পারে? আবরার পড়তো হয়তো বিজ্ঞানের বই, পরীক্ষা পাশের জন্য পড়তো। তার বিজ্ঞান মনস্কতা ছিল না। নিজস্ব চিন্তার শক্তি ছিল না। একে আমি পড়ুয়া বলতে পারি, মেধাবী বলবো না। আবরার ছিল নিব্রাস ইসলামদের মতো। একবিংশ শতাব্দির আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, কিন্তু মাথায় চোদ্দশ বছর আগের অবিজ্ঞান আর অনাধুনিকতা।
আবরার অফিসিয়ালি শিবির না করলেও শিবিরের মতো চাল চলন আর চিন্তা ভাবনা বানিয়েছিল । তাতে কী! শিবিরদেরও বাঁচার অধিকার আছে। তাকে যারা পিটিয়েছিল, আমার বিশ্বাস, মেরে ফেলার উদ্দেশে পেটায়নি। কিন্তু মাথায় আঘাত লেগেছে, মরে গেছে। যারা পিটিয়েছিল, তাদের শাস্তি অবশ্যই হতে হবে। এর মধ্যেই কয়েকটাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’