স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় স্বামীকে মারধর, চুরির মামলা
১১ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:২১
ঢাকা: রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকায় স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় এক ব্যক্তিকে মারধর ও তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) পল্লবী থানা পুলিশ ওই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করলে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার সারাবাংলার এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ জানান।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দেখা যায়, কথিত আসামি রহিম, আদালতের বারান্দায় অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে আছেন। রহিমের পাশে তার স্ত্রী, বোন ও ভাগ্নি আদালতের বারান্দায় বসে বিভিন্নভাবে আহাজারি করছেন।
রহিমের বোন জাহানারা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ভাইকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। পূর্বের শত্রুতার জের ধরে মারধর করে ওরাই আবার মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে চালান করেছে। আমার ভাই দিনমজুর, সে ইটের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে।’
রহিমের ভাগ্নি নূর ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার মামি একসময় গার্মেন্টসে কাজ করতেন। আর মামা ইটের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিছুদিন আগে মামিকে কিছু বখাটে উত্ত্যক্ত করে। এর প্রতিবাদ করায় মামাকে তারা মারধর করে। এরপরেও ওই বখাটেরা ক্ষান্ত হয়নি। ফের মামিকে বিরক্ত করতে থাকে। মামা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে আবার মারধর করে মিথ্যা মামলা দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে ডেকে নিয়ে মারধর করে। এরপর ওরা নাটক সাজায় মোবাইল চুরি করতে গিয়ে তিনতলা থেকে পড়ে গেছে। আসলে এমন কিছুই ঘটেনি। ঘটনার পরের দিন মামাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। এর দুই দিন পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। অসুস্থ অবস্থায় আজকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে এনেছেন। অথচ মামা ঠিকমত দাঁড়াতে পারছে না। চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। উকিল ধরার মত টাকাও নেই যে জামিন চাইব। এ জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতের ২য় তলায় বারান্দায় শুয়ে রেখেছে পুলিশ। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসামি অসুস্থ। তার চিকিৎসা দরকার। কিন্তু হাসপাতালে থেকে তাকে আজ রিলিজ করে দিয়েছে। এজন্য নিয়ম অনুসারে আজকে আদালত হাজির করতে হয়েছে। আজকে আসামিপক্ষের কোনও জামিনের আবেদন ছিল না। তাই ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাকে কারাবিধি অনুযায়ী (চিকিৎসার জন্য) ডিভিশনসহ কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা জামিনযোগ্য ধারা, আসামিরা জামিন চাইলে জামিন পাবেন। আসামি অপরাধী কি নিরপরাধী সেটা তদন্ত শেষ করার পর জানতে পারব।’
মো. রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার কথা বলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ওরা আমাকে অনেক মেরেছে। আমি বাঁচতে চাই। ওরা সন্ত্রাসী, বড় ধরনের সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।’
এক প্রশ্নের জাবাবে রহিম বলেন, ‘আমি কিছুই চুরি করিনি। বরং আমার পকেটে থাকা নগদ চার হাজার টাকা ও পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের লাভা স্মার্টফোন নিয়ে গেছে। মারধোর করার পর আমি জ্ঞান ফিরে শুনি ওরা নাকি আমার পকেটে একটি বাটনওয়ালা ১৫শ টাকার ফোন পেয়েছে। আমি কিছু জানি না।’
তিনি বলেন, ‘আমি কোনো বাসার তিন তলা থেকে লাফ দেইনি। যদি লাফ দিতাম তাহলে আমার পায়ে সমস্যা হতো। ঘাড়ে ব্যথা পেতাম না। ওরা আমাকে ইট দিয়ে কাঁধে আঘাত করেছে। মনে হচ্ছে বাম হাতের হাড় ভেঙে গেছে। আমি এর বিচার চাই।’
আদালতে উপস্থিত মামলার বাদী মুয়াজ সারাবাংলাকে জানান, পল্লবীতে আমার বাসার ২য় তলা থেকে তিনটা মোবাইল চুরি হয়ে গেছে। সেই অভিযোগে রহিমের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। চুরি করার পর সে তিন তলা থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যায়। তাকে কেউ মারধর করেনি।
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা আসামি রহিম কীভাবে জামিন পাবে সেটার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী বলেন, আসলে রহিম মোবাইল চুরি করেছে কি না সেটা সঠিক বলতে পারছি না, তবে মোবাইল চুরি হয়েছে এটা সত্য। মামলার তদন্তের শেষে জানা যাবে আসলে চুরি করেছে কি না। আরও কিছু প্রশ্ন করতে চাইলে বিরক্ত প্রকাশ করেন তিনি।
মামলায় বাদী অভিযোগে বলেন, গত ১ অক্টোবর ভোর সোয়া ৫টায় তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। লোকজনের চিৎকারে তার ঘুম ভেঙে যায়। পরে জানতে পারেন সুজনের ১৫শ টাকা দামের একটি ওয়ালটন মোবাইল, তুহিনের ১৪শ টাকার নোকিয়া মোবাইল এবং আল আমিনের ১৮ শ টাকা মূল্যের একটি স্যামসাং মোবাইল রহিম চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় তৃতীয় তলা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে আহত হয়।