খামারিদের ঝুঁকি কমাবে ফিনিক্সের ক্যাটেল ইনস্যুরেন্স পলিসি
১২ অক্টোবর ২০১৯ ১০:২০
ঢাকা: আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গবাদিপশুর জন্য বীমা চালু করেছে ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। খামারিদের গবাদি পশুকে বীমার আওতায় আনতে ‘ক্যাটেল ইনস্যুরেন্স পলিসি’ নামে এই প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে চালু করা হয়েছে। এই পলিসির মাধ্যমে ৫ থেকে ৬ বছর মেয়াদের জন্য গরু-মহিষ তথা গবাদিপশুকে বীমার আওতায় আনা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বীমার আওতায় আসা গবাদিপশু চুরি হলে, হারিয়ে গেলে অথবা কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়াও দুর্ঘটনায় আহত বা রোগে আক্রান্ত হয়ে বীমা করা কোনো গবাদি পশু স্থায়ীভাবে পঙ্গু হলে তার চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দেবে ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স। দেশে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া এই ক্যাটেল ইনস্যুরেন্স পলিসির আইটি সাপোর্ট দিচ্ছে আইটি প্রতিষ্ঠান সূর্যমুখী।
গবাদিপশুর বীমার বিষয়ে জানতে চাইলে ফিনিক্স ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জামিরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যবসায়িক মানসিকতা থেকে নয়, দেশের খামারিদের ঝুঁকি কমানোর বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা এই ইনস্যুরেন্স পলিসি চালু করেছি।’
তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় প্রিমিয়াম একটু বেশি হলেও যখন বেশি পরিমাণ গবাদিপশুকে বীমার আওতায় নিয়ে আসা হবে, তখন প্রমিয়ামটি কমে যাবে। তাছাড়া আমরা রি-ইনস্যুরেন্স করেছি বিশ্বের সেরা রি-ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে। ফলে খামারিদের কোনো ঝুঁকি থাকছে না।
বীমার আওতায় আসবেন কারা
দেশের অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গবাদিপশু খামারিদের ঋণ দেয় না। যে কারণে দেশের লাখ লাখ খামারি যে গবাদিপশু পালন করেন, কোনো দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার কারণে সেই গবাদিপশু মারা গেলে খামারদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এ কারণে এই খাতে ঋণ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে— এমন আশঙ্কায় অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খামারিদের ঋণ দিতে চায় না। ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এখন গবাদিপশুকে ইনস্যুরেন্সের আওতায় নিয়ে আসায় খামারিদের জন্য ঋণ পাওয়া সহজ হবে। প্রাথমিকভাবে এই সুযোগ থাকছে কেবল খামারিদের জন্যই। যারা ব্যক্তিগতভাবে গবাদিপশু পালন করেন, তারা এই বীমা সুবিধা আপাতত পাচ্ছেন না।
বীমার আওতায় থাকা পশু থাকবে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (আরএফ) আইডেনটিফিকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে বীমার আওতায় আসা গবাদিপশুর সঠিক স্বাস্থ্য, রোগবালাইয়ের তথ্য ও অবস্থান নির্ণয় করার সুবিধা থাকছে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম এমন একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যার মাধ্যমে ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল সফটওয়্যারের মাধ্যমে গরুকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রাণীর জাত নির্ণয় ও উন্নয়ন এবং প্রজনন অবস্থাসহ প্রাণীকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের আওতায় রাখা হয়। ফলে পশুর রোগব্যাধি, শরীরের তাপমাত্রা, গাভীর গর্ভাবস্থা নির্ণয়, প্রসবের সম্ভাব্য সময়ের আগাম তথ্য সহজেই জানা সম্ভব হয় এবং টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে অসুস্থ প্রাণীর দ্রুত সুচিকিৎসাও নিশ্চিত করা সম্ভব।
পশুর পেটে থাকবে বায়োসেন্সর
বীমা করা পশুর তথ্য জানতে প্রতিটি গরুর পাকস্থলীতে একটি বায়োসেন্সর প্রবেশ করানো হয়। এই বায়োসেন্সর প্রাণীর পাকস্থলী থেকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করে। এই বায়োসেন্সর গবাদি প্রাণীর পাকস্থলীতে অন্তত পাঁচ বছর কার্যকর থাকে। তবে এটি পশুর দেহে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না বলে জানিয়েছে ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। তাদের ক্যাটেল ইনস্যুরেন্স পলিসির এই বায়োসেন্স সরবরাহ করছে আইটি প্রতিষ্ঠান সূর্যমুখী প্রাণীসেবা।
গবাদি পশুর বার্ষিক প্রিমিয়াম
প্রতিটি গবাদি পশুর বীমা অঙ্ক ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দুগ্ধবতী গাভী, দুধেল মহিষ, মাদি বাছুর, বকনা বাছুর, প্রজনন ষাঁড় ইত্যাদি বীমার আওতায় আনা হয়। খামারের প্রত্যেকটি পশুকে আলাদাভাবে বীমা করতে হয়। প্রতিটি পশুর মৃত্যুজনিত বার্ষিক প্রিমিয়াম বীমা করা টাকার হার সাড়ে চার শতাংশ, চুরি হলে কিংবা হারিয়ে গেলে বার্ষিক প্রিমিয়াম আড়াই শতাংশ। কোনো পশু অসুস্থ হলে কিংবা আহত হয়ে পঙ্গু হলে তার পুরো চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে বীমা কোম্পানি। এছাড়াও প্রিমিয়ামে পাশাপাশি প্রতিটি গরুর পাকস্থলীতে বসানো বায়োসেন্সরের জন্য এককালীন ১ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা দিতে হয়।
পলিসির আওতায় ৫ খামার
প্রথম অবস্থায় পাঁচটি খামারের দেড় শতাধিক গরুকে ‘ক্যাটেল ইনস্যুরেন্স পলিসি’র আওতায় আনা হয়েছে। খামারগুলো হলো— সেঞ্চুরি ডেইরি (পূর্বাচল), আবদুর রহমান ডেইরি (ভবানিপুর), শিল্পীয়া ডেইরি (পাবনা), অফাদ ডেইরি (পাবনা) ও রাজধানীর উত্তরখানের সরকার ডেইরি।
গবাদি পশুকে মনিটরিং করতে ডিজিটাল চিপস ব্যবহারের প্রসঙ্গে সূর্যমুখী আইটি ফার্মের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. ফিদা হক সারাবাংলাকে বলেন, সূর্যমুখী তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্তকরণের মাধ্যমে ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স ক্যাটেল ইনস্যুরেন্স পলিসি বাস্তবায়নে সহায়তা করছে।
তিনি বলেন, আমাদের চিপসের মাধ্যমে গরুর অসুখ-বিসুখ হওয়ার তথ্য ১৮ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খামারিকে মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে গরু তো মরছেই না, বরং বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা গরুর জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছি।
ক্যাটেল ইনস্যুরেন্স পলিসি অন্যতম উদ্যোক্তা ফনিক্স ইনস্যুরেন্সের ডিজিএম নাহিদ সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ক্যাটেল ইনস্যুরেন্স রয়েছে। বাংলাদেশে নেই কেন, এটা নিয়ে আমি ভাবতাম। পরে ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স ও আইটি ফার্ম সূর্যমুখীর মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি আমিই করেছি। এর ফলেই এখন ক্যাটেল ইনস্যুরেন্স চালু হয়েছে আমাদের দেশেও।
ফিনিক্স ইনস্যুরেন্সে নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল রহমান সারাবাংলাকে বলেন, খামারিদের একটি খামারের পেছনে বিনিয়োগ অনেক। কিন্তু গরু-মহিষ যেকোনো সময় মারা যেতে পারে— এই আশঙ্কায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণ দিতে চায় না। খামারিরা বীমার আওতায় এলে ঝুঁকি কমবে এবং ব্যাংক ঋণ পাওয়া সহজ হবে।
ক্যাটল ইনস্যুরেন্স গবাদিপশু গবাদিপশুর বীমা পশুর বীমা ফনিক্স ইনস্যুরেন্স সূর্যমুখী আইটি