Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চালানে পচা পেঁয়াজের অজুহাত, ৪২ টাকায় কিনে বিক্রি ৭০ টাকায়


১৫ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:০৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিয়ানমার থেকে আমদানি চালানে নিম্নমানের পেঁয়াজ আসার অজুহাত দেখিয়ে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম বাড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালেও মিয়ানমার থেকে আসা প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৭০ টাকায়। যা কেজিপ্রতি ৪২ টাকায় কেনা হয়েছিল। একইভাবে ভারতীয় পেঁয়াজের দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয় খাতুনগঞ্জে।

পেঁয়াজের বাজারে এমন অস্থিরতা মাথাচাড়া দিতেই খাতুনগঞ্জে মঙ্গলবার দুপুরে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানের পর পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

অভিযানের সময় বেশ কয়েকজন আড়তদার ও কমিশন এজেন্ট পালিয়ে যান। আমদানি মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে- মেসার্স আজমির ভাণ্ডার এবং শাহ আমানত ট্রেডার্স।

ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, আজমির ভাণ্ডারে ৪২ টাকা দরে কেনা মিয়ানমারের পেঁয়াজ পাইকারিতে ৭০ টাকা দরে এবং শাহ আমানত ট্রের্ডাসে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। অন্যান্য আড়তে ভারতীয় পুরনো পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৭৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

‘আমরা এর আগেও দুদফা অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। এরপর পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছিল। কিন্তু মিয়ানমার থেকে নিম্নমানের পেঁয়াজ আসছে এমন অজুহাত দেখিয়ে গত দুইদিনে আবারও দাম বাড়ানো হয়। অথচ আমদানি চালানের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ পেঁয়াজ কিছুটা নিম্নমানের, কিন্তু বিক্রয় অযোগ্য নয়।’

বিজ্ঞাপন

অভিযানের সময় বিভিন্ন আড়ত ও পাইকারি দোকানের সামনে নিম্নমানের পেঁয়াজ দেখতে পেয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংশ্লিষ্টরা। সেগুলোর দাম কিছুটা কম দেখিয়ে ভেতরে রাখা ভালোমানের মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি করছিল ৭০ টাকায়।

ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪২ টাকায় কেনা হয়েছে। গাড়িভাড়া এবং নিম্নমানের পেঁয়াজের দামও সমন্বয় করলে পাইকারিতে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৫০-৫২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমদানিকারক ও আড়তদারেরা এমনভাবে প্রচার চালাচ্ছেন যে, মিয়ানমার থেকে আসা সব পেঁয়াজই পচা। এটা দাম বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম কারসাজি।’

অভিযানের সময় দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন কমিশন এজেন্টের নাম পান ম্যাজিস্ট্রেট। এদের মধ্যে কায়সার সওদাগর, এয়াকুব সওদাগর এবং রফিক সওদাগরের খোঁজে প্রতিষ্ঠানে গিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি। কমিশন এজেন্টদের তথ্য র‌্যাব ও পুলিশকে দিয়ে তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট।

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকজন কমিশন এজেন্টের নাম পেয়েছি। ব্যবসায়ী সমিতির কাছে আমদানিকারকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়েছি। তারা সেটা দেওয়ার পর আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তারা কি পরিমাণ পেঁয়াজ কত দামে আমদানি করছে এবং বাজারে কত দামে সরবরাহ করছে সেটা আমরা যাচাইবাছাই করে দেখব। এছাড়া গোয়েন্দা নজরদারিও থাকবে।’

এদিকে অভিযানের সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মূল্যতালিকা অনুযায়ী পেঁয়াজের দাম রাখার জন্য সতর্ক করেন ম্যাজিস্ট্রেট। জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা জানান, অভিযানের পর মিয়ানমার থেকে কেনা প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ভারতের পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১ অক্টোবর খাতুনগঞ্জে অভিযানের সময় পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখার অঙ্গীকার করে মুচলেকা দিয়েছিলেন খাতুনগঞ্জের আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।

আমদানি নিম্নমানের পেঁয়াজ মিয়ানমার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর