বিলুপ্ত ছিটমহল উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব, সম্প্রসারিত হচ্ছে প্রকল্প
১৮ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:২৯
ঢাকা: স্বাধীনতার পরও বহু বছর পরাধীন থেকে মুক্তির স্বাদ পাওয়া দেশের ছিটমহল এলাকায় মানুষের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এসব ছিটমহল এলাকায় পিছিয়ে পড়া অবকাঠামো উন্নয়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ‘পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার (বিলুপ্ত ছিটমহল) গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প। বর্তমানে প্রকল্পটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান প্রশাস্ত কুমার চক্রবর্তী সারাবাংলাকে এ প্রসঙ্গে বলেন, বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে সেটি স্থগিত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পিইসি সভাটি অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানায়, ‘পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার (বিলুপ্ত ছিটমহল) গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ১৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুনে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। পরে ব্যয় একই থাকলেও চলতি বছরের জুনে বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ২০১৮ সালের ১৯ জুন প্রকল্পটি অনুমোদন করেন। এর মধ্যেও বাস্তবায়ন শেষ না হওয়ায় এখন আবারও সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ৪৪ বছর ছিটমহল এলাকার অধিবাসীরা বিভিন্ন নাগরিক সামাজিক ও ধর্মীয় সুবিধা হতে বঞ্চিত ছিল। ছিটমহল গুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এবং প্রকল্প এলাকাগুলো সীমান্তবর্তী ও দুর্গম হওয়ার কারণে ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত সব কাজ এখনো পর্যন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি। ছিটমহল এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো উন্নয়নের জন্য মূল ডিপিপি ও প্রথম সংশোধিত ডিপিপি প্রণয়ণের সময় ছিটমহলগুলোর সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রস্তাব করা হলেও ছিটমহলগুলোর এলাকায় পূর্ণাঙ্গ রোড নেটওর্য়াক তৈরি হয়নি। এসব কারণে রোড নেটওয়ার্ক শেষ করার জন্য কয়েকটি সড়ক ও সেইসঙ্গে আরও কয়েকটি সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং প্রকল্পভুক্ত অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্য মোট ২২৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর হতে ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি দ্বিতীয়বার সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়, এই প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ২১০ দশমিক ৩৩১ কিলোমিটার সড়ক, ৭২৫ দশমিক ৬৩ মিটার ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, ছয়টি কমিউনিটি সেন্টার, ছয়টি মন্দির, ছয়টি ঘাট নির্মাণ, তিন কিলোমিটার খাল খনন, পুনঃখনন, তিনটি শ্বশানঘাট, দুইটি কবরস্থানের উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত ছিল। মূল ভূখণ্ড থেকে ছিটমহল অধিবাসীরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে প্রাথমিকভাবে কেবল গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর নির্বাচন করায় ছিটমহল এলাকায় সড়কগুলোর একটি যথাযথ নেটওয়ার্ক তৈরি হয়নি। অসম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো তৈরির মাধ্যমে ছিটমহলের সড়কগুলোর সঙ্গে অন্য সড়কগুলোর নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য কিছু রাস্তার সংযোজন প্রয়োজন।
এছাড়া, ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত ১৫টি মসজিদের মধ্যে ১৩টি মসজিদের কাজ শেষ হয়েছে ও দুইটির কাজ চলমান রয়েছে। ছয়টি মন্দিরের মধ্যে পাঁচটি মন্দিরের কাজ শেষ হয়েছে, বাকি একটির কাজ চলমান রয়েছে। ছিটমহল এলাকার যেসব গ্রামে মসজিদ, মন্দির, শ্বশান, কবরস্থান ইত্যাদি সামাজিক অবকাঠামো প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ছিল না, সেসব এলাকার ৯টি মসজিদ, তিনটি মন্দির, দুইটি কবরস্থান ও একটি শ্বশান প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, নবগঠিত ছিটমহলগুলোর সড়কের অ্যালাইনমেন্ট আগে থেকে না থাকায় নতুন করে অ্যালাইনমেন্ট প্রস্তুত করে কাজ করায় এবং প্রকল্পের স্কিমগুলো সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় প্রকল্পের কাজে দেরি হয়েছে। ছিটমহলগুলোর কিছু কিছু এলাকায় মসজিদ, মন্দির, ও সড়কের স্থান নির্ধারণে স্থানীয় জনগণের সিদ্ধান্তে দেরি হয়েছে এবং চলমান কাজ যেমন— ব্রিজ, কালভার্ট, গ্রোথ-শেল্টার, হাটবাজার ও কমিউনিটি শেল্টার ইত্যাদি কাজ নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে প্রকল্পটির সময় বাড়ানো প্রয়োজন।
রেট শিডিউল পরিবর্তন
মূল ডিপিপির প্রাক্কলিত ব্যয় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের রেট শিডিউল অনুযায়ী করা হয়েছিল। এলজিইডির রেট শিডিউল প্রতিবছর জুলাই মাসে বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তন করা হয়। সে কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।
ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটির অনূকুলে ১৭০ কোটি ৯৭ টাকা ব্যয় হয়েছে, যা অনুমোদিত প্রকল্পের ৯৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এই সময়ে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি প্রায় ৯৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ অনুমোদিত প্রকল্পের কার্যক্রম প্রায় সমাপ্তির পর্যায়ে রয়েছে। নতুন কিছু কাজ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে এবং এই কাজগুলো সম্পাদনের জন্য প্রকল্প মেয়াদ একবছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পের কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়ে যাওয়ায় এ প্রকল্পটি সমাপ্ত করে নতুন প্রকল্পের আওতায় বা অন্য কোনো চলমান প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত নতুন কাজগুলো করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে বলে মত দিয়েছে কমিশন।
অবকাঠামো উন্নয়ন কুড়িগ্রাম ছিটমহল ছিটমহল উন্নয়ন পঞ্চগড় বিলুপ্ত ছিটমহল লালমনিরহাট