ডিসেম্বরের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসছে না ২৭ বিমা কোম্পানির একটিও
২১ অক্টোবর ২০১৯ ১১:০৪
ঢাকা: চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পুঁজিবাজারে ২৭ বিমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হতে নির্দেশ দেয় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। জানা গেছে, এ সময়ের মধ্যে ২৭ কোম্পানির একটিও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে, যে কোনো বিমা কোম্পানিকে আইডিআরএ ছাড়পত্র নিতে হয়। আইডিআরএর কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে আইপিওর জন্য আবেদন করতে হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আইডিআরএর ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি। এ অবস্থায় আগামী ২৮ অক্টোবর ২৭ বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে করণীয় নির্ধারণে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আইডিআরএ।
এ ব্যাপারে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএর)-এর সদস্য গকুল চাঁদ দাস সারাবাংলাকে বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে ২৭ বিমা কোম্পানিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর আইডিআরএ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ওই নির্দেশনার এক মাস অতিবাহিত হলেও কোন বিমা কোম্পানি আইপিওর আবেদন করতে আইডিআরএর কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে আবেদন করেনি।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরের মধ্যে ২৭ বিমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির নির্দেশ
তিনি বলেন, এ অবস্থায় করণীয় জানতে আগামী ২৮ অক্টোবর আইডিআরএর কার্যালয়ে ২৭ বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) ডাকা হয়েছে। যাতে কোম্পানিগুলোকে দ্রুত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যায়।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এসব কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হবে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে অন্তত প্রক্রিয়াটা শুরু করা যায়।
এদিকে আইডিআরএর একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ২০১১ সালে ২৬টি সরকারি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে তৎকালিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত নির্দেশনা দেন। কিন্তু গত আট বছরে একটি কোম্পানিও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি।
তারা আরও বলেন, বর্তমান অর্থমন্ত্রী ২৭টি বিমা কোম্পানিকে তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু হাতে গোনা দুই-তিনটি কোম্পানি ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার মতো ভিত্তি নেই। কারণ লাভজনক কোম্পানি না হলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া যায় না। এই শর্তের কারণে অধিকাংশ বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারছে না।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জীবন বিমা করপোরেশন, সাধারণ বিমা করপোরেশন ও দুটি বিদেশি বিমা কোম্পানিসহ মোট ৭৮টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি জীবন বিমা, ৪৬টি সাধারণ বিমা এবং দুটি বিদেশি বিমা কোম্পানি রয়েছে। বিদেশি বিমা কোম্পানি দুটি হলো আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বা মেটলাইফ, লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন অব বাংলাদেশ।
সূত্র সানায়, ৭৮টি বিমা কোম্পানির মধ্যে ৪৭টি কোম্পানি বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। বাকি ২৭টি কোম্পানিকে নতুন করে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি জীবন বিমা কোম্পানি এবং ৯টি সাধারণ বিমা কোম্পানি রয়েছে। বাকি চারটি কোম্পানির মধ্যে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত, একটি বিদেশি মেটলাইফ ও বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ কোম্পানি এই চারটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে জটিলতা রয়েছে।
যে ২৭ বিমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হয়নি: ২৭টি বিমা কোম্পানির মধ্যে জীবন ১৮টি কোম্পানি হলো, বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, বেস্ট লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, প্রোটেক্টিভ ইসলামি লাইফ, সোনালী লাইফ, জেনিথ ইসলামি লাইফ, আলফা ইসলামি লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফ, যমুনা লাইফ, মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফ, স্বদেশ লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ ও এলআইসি বাংলাদেশ।
অন্যদিকে সাধারণ বিমা ৯টি কোম্পানি হলো ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, সাউদ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনরেল ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ও সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। উল্লেখিত কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে মূলধনের ৪০ শতাংশ অর্থ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিওর) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে।
সূত্র জানায়, বিমা আইনানুযায়ী কোনো কোম্পানি নিবন্ধিত হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।এ সময়ের মধ্যে কোন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে না পারলে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে আরো ৬ মাস সময় বাড়াতে পারে। এরপরেও তালিকাভুক্ত না হলে, ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে ২০১১ সাল থেকে প্রতিটি বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দিয়ে আসছে।
উল্লেখ্য গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আগামী তিন মাসের মধ্যে যেসব বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয়নি তাদের তালিকভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেন।