সাভার চামড়া শিল্পনগরী থেকে প্লট হারাচ্ছেন ১১ উদ্যোক্তা
২৩ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:৫৬
ঢাকা: সাভার চামড়া শিল্পনগরী থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পরও কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় বাতিল হচ্ছে ১১ উদ্যোক্তার প্লট বরাদ্দ। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন-বিসিকের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী কারখানা নির্মাণ এবং উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। বাতিল করা প্লট মালিকদের বিরুদ্ধে শিগগরিই চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছে তারা।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী-এডিপি’র অন্তর্ভূক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। এডিপি’র আওতায় থাকা ‘সাভার চামড়া শিল্প নগরী’র অগ্রগতি প্রতিবেদনে ১১ উদ্যোক্তার কারখানা নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। প্লট বাতিল হওয়া উদ্যোক্তাদের মধ্যে মেসার্স হেলাল ট্যানারী, মেসার্স সোনালী ট্যানারী, হোসেন ব্রাদার্স, মেসার্স করিম লেদার, প্যারামাউন্ট ট্যানারি লিমিটেডসহ ১১ জন রয়েছেন এই তালিকায়।
এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী মাহমুদ হুমায়ুন জানান, আগামী জুনের মধ্যে সাভার চামড়া শিল্প নগরীর কাজ পুরোপুরি শেষ হচ্ছে। কিন্তু বারবার নোটিশ করা সত্বেও ট্যানারি শিল্প মালিকদের অনেকেই নতুন এ শিল্প নগরীতে প্লট নিয়েও কাজ শুরু করেনি। যারা কারখানা নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের প্লট বাতিল করা হচ্ছে।
সরকারের সঙ্গে নানা দরকষাকষিতে ২০০৩ সালে নেওয়া সাভার চামড়া শিল্প প্রকল্পটি গড়ে উঠতে প্রায় দুই দশক লেগে যায়। দফায় দফায় সংশোধন আর ট্যানারি মালিকদের নানা দেন দরবারে তা বাস্তবায়নের সময় গিয়ে ঠেকে ২০২০ সালে। ওদিকে, রাজধানীর হাজারিবাগ থেকে সাভারে কারখানা স্থানান্তরে আদালতের আদেশের প্রয়োজন হয়। সেই আদেশের পরেই ২০১৭ সাল থেকে কারখানা সরাতে শুরু করেন হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা। এখনো চলছে স্থানান্তরের কাজ।
বিসিক কর্মকর্তারা বলছেন, প্লট বরাদ্দের এই দীর্ঘ সময় পরও কোনো কোনো ইউনিটে রয়েছে ঘাসের রাজত্ব। কোথাও চলছে কচ্ছপ গতিতে নির্মাণ কাজ। আবার কেউ কোনো কাজই শুরু করতে পারেনি ১৫৪ ইউনিটের এই শিল্প নগরীতে। প্লট নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেননি এমন ১১ ট্যানারি শিল্প কারখানার তালিকা চূড়ান্ত করে শেষ পর্যন্ত তা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অথচ ট্যানারি মালিকদের সংগঠনের নেতারা বলছেন, ধলেশ্বরী নদীপাড়ে ২শ একরের এই চামড়া শিল্প নগরীতে স্থান স্বল্পতার কারণে কোনো প্লটই দেওয়া হয়নি শিল্প সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের। হাজারীবাগে ট্যানারি ছিল এমন অন্তত ৭০ জন উদ্যোক্তা বাদ পড়েছেন।
এদিকে ১৭ একর জমির ওপরে নির্মিত কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার বা সিইটিপি নির্মাণ শেষ হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে যদিও বলা হচ্ছে ৯৮ ভাগ শেষ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী মাহমুদ হুমায়ুন জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সাভার চামড়া শিল্প নগরির সিইটিপি নির্মাণ শেষ হবে। এ লক্ষে নভেম্বরের মধ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ করতে বিসিককে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
১৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে সাভারে চামড়া শিল্প নগরী নামে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০০৩ সালে। এরপরে একদফা সংশোধন আনা হলেও ২০১৭ সালে তৃতীয়বারের মতো সংশোধনী এনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক সভায় নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন এ প্রকল্প ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ১৯৪ দশমিক ৪০ একর জমির ওপরে স্থাপিত সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে মোট প্লটের সংখ্যা ২০৫টি। এর ওপর শিল্প ইউনিট হবে ১৫৫টি হবে। ১৫৫ প্লটের মধ্যে একটি প্লটের ক্ষেত্রে মামলা থাকায় ১৫৪টি প্লট শিল্প মালিকদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে চামড়া শিল্প নগরীর কাজ শেষ হচ্ছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য সংশ্লিষ্ট লিঙ্কেজ ইন্ডাস্ট্রি স্থাপনের জন্য একটি আলাদা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের অধীনে প্রতিষ্ঠা করা হবে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট।