Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঐক্যফ্রন্টের মোহ কেটে গেছে বিএনপির


২৮ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:১৩

ঢাকা: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বিএনপির মোহ কেটে গেছে। যাত্রার শুরুতে দলটির যেসব নেতা জোটের কর্মসূচিতে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করতেন, তারা এখন আর ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে যান না। উপরন্তু ঐক্যফ্রন্টের কর্মকাণ্ড নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন কেউ কেউ। ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও তোলেন অনেকে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে নির্বাচনী জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করে বিএনপি। কিছুদিনের মধ্যেই সে জোটে যোগ দেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন সামনে রেখে গঠিত এই জোটের কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ ও ‘লিয়াজোঁ কমিটি’ নামে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। স্টিয়ারিং কমিটিতে প্রতিটি দলের তিনজন শীর্ষ নেতা এবং লিয়াজোঁ কমিটিতে প্রতিটি দলের চারজন মধ্যম সারির নেতা অন্তর্ভুক্ত হন।

স্টিয়ারিং কমিটিতে বিএনপির তিন প্রতিনিধি ছিলেন- দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আর লিয়াজোঁ কমিটিতে ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যা বুলু, মো. শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী এবং হাবিবুর রহমান হাবিব। এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঢাকা মহানগরের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম।

বিজ্ঞাপন

অর্থাৎ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রার শুরুতে বিএনপির এই আট শীর্ষ নেতা জোটের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ড রোডে প্রিতম-জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপনের আগে বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসা, মতিঝিল চেম্বার, উত্তরায় আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বাসায় অনুষ্ঠিত জোটের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকগুলোতে নিয়মিত যেতেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

আর কালভার্ড রোডে ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপনের পর সেখানে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভা, সংবাদ সম্মেলন, যৌথসভাসহ জোটের সবধরনের অনুষ্ঠানে লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বরকত উল্যা বুলু, মো. শাহজাহান, মনিরুল হক চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব এবং সমন্বয় কমিটির প্রধান আবদুস সালামকে নিয়মিত দেখা যেত। মাঝে মাঝে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুও যেতেন সেখানে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপির এসব শীর্ষ নেতার মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া কেউ আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করেন না। জোটের কোনো অনুষ্ঠানে সচারাচার তাদের দেখা যায় না। এর মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সকল কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।

কিন্তু খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে সংকটকাল অতিক্রমের চেষ্টায় থাকা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেননি। খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অনুরোধে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান ও গয়েশ্বরচন্দ্র রায় জোটের স্টিয়ারিং কমিটির অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু কিছু দিন পর তারাও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন।

উপায়ন্ত না দেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিটিংয়ে দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয়। আর এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মূলত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে যে আগ্রহ বা মোহ ছিল বিএনপি নেতাদের, এই মুহূর্তে সেটা আর নাই। সে কারণেই জোট গঠনের শুরুতে বিএনপির যেসব নেতা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তারা এখন জোটের খবর রাখেন না। এমনকি বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে কে বা কারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আসা যাওয়া করছেন, সে ব্যাপারেও তারা খোঁজ-খবর রাখেন না।

জানতে চাইলে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো খবর আমি জানি না। সুতরাং ফ্রন্ট নিয়ে কোনো বক্তব্য আমি দিতে পরব না।’

গয়েশ্বরচন্দ্র রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিষয়টি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেখছেন। এ ফ্রন্টের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নাই।’

বরকত উল্যা বুলু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যাই না। বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে কে যায়, তাও জানি না। মহাসচিব যাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, সে হয়তো যায়।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপিতে কি নেতার আকাল পড়েছে যে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে রাজনীতি করতে হবে? খালেদা জিয়ার অবর্তমানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই তো বিএনপির নেতা। তিনি পারেন না নেতৃত্ব দিতে? ধার করা নেতা দিয়ে আন্দোলন করতে হবে কেন?’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি মোহ

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর