যে ৩ অভিযোগে ফাঁসির আদেশ হয়েছিল এ টি এম আজহারের
৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৪৫
ঢাকা: একাত্তর সালে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোসহ তিন অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করলে তারও শুনানি শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) আপিলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ।
এ টি এম আজহারুলের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনীত ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে তিনটি অভিযোগে ফাঁসি, দু’টি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং একটি অভিযোগে তাকে খালাস দিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর রায় দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
যে তিন অপরাধে ফাঁসি হয়েছিল
একাত্তর সালে ১৬ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ধাপপাড়ায় ১৫ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই গ্রামে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে এ টি এম আজহারুল ইসলাম নিজেও এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। ওই ঘটনায় শহীদদের মধ্যে ১৪ জনের নাম-পরিচিতি শনাক্ত করা গেছে। এটি ছিল তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, এ টি এম আজহারের নেতৃত্বে ১৭ এপ্রিল নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ারবিলে একহাজার ২২৫ নিরীহ লোককে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় একহাজার ২২৫ জন শহীদ হন, যাদের মধ্যে ৩৬৫ জনের নাম-পরিচিতি পাওয়া গেছে। শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ— কেউ ওই হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি। গণহত্যার শিকারদের মধ্যে ২০০ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিল বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, ১৭ এপ্রিল কারমাইকেল কলেজের চার জন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপক পত্মীকে ধরে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন এ টি এম আজহারুল।
এই তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
ধর্ষণের দায়ে ২৫ বছর
এ টি এম আজহারুলের বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগটিও প্রমাণিত হয়। এই অভিযোগে বলা হয়, তার পরিকল্পনায় ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর শহর ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সী নারীদের ধরে এনে রংপুর টাউন হলে আটকে রেখে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। সে সময় নারীদের ধরে এনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হতো। রংপুর টাউন হলে তাদের আটক রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হতো। এ অপরাধে ২৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় আজহারকে।
এছাড়া প্রমাণিত ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় একজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। একই বছরের ১ ডিসেম্বর রংপুর শহরের বেতপট্টি থেকে এজনকে অপহরণ করে রংপুর কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে নিয়ে আটক রেখে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন ও গুরুতর জখম করেন আজহার। এ অপরাধে তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
এছাড়া প্রমাণিত না হওয়ায় এক নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদেশে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট আজহারের ঢাকার মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় এ টি এম আজহারুল ইসলামকে। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আপিল শুনানি এ টি এম আজহারুল এ টি এম আজহারুল ইসলাম মানবতাবিরোধী অপরাধ