পেঁয়াজের কেজি দেড়শ টাকা ছাড়াল
১ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:৪২
ঢাকা: দেশে পেঁয়াজের বড় চালান আসছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রিণালয়। এছাড়া নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে বাজারে আরও নতুন পেঁয়াজ আসার কথা বলেছে তারা। তবে এই সুখবরের পরও দিন দিন লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজার ও মোকাম থেকে পেঁয়াজ বেশি দামে কেনায় তাদেরও পণ্যটি বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে তাদের কিছুই করার নেই। আর ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের কাছে তারা এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা, নতুনবাজার ও বাড্ডা বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারের অধিকাংশ দোকানে পেঁয়াজ কম। দোকানিরা কারণ হিসেবে বলছেন, দাম বেশি আর পাইকারি বাজারে সংকটের কারণে তারাও পেঁয়াজ পাচ্ছেন না। ফলে তাদের বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৫০-১৫৫ টাকা, মিশরীয় পেঁয়াজ ১৩০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুইদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। ওই সময় মিশরীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা আর মিয়ানমার পেঁয়াজ ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বসুন্ধরা কাঁচা বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত মঙ্গলবার পাইকারি বাজার থেকে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ কিনেছি ১২৫ টাকায়, যা গতকাল ছিল ১৪০ টাকা। এছাড়া মিশরীয় পেঁয়াজ কিনেছিলাম ১১০ টাকায়, অন্যদিকে মিয়ানমার পেঁয়াজ ১১৫ টাকায়। কিন্তু পাইকারি বাজারে সরবরাহ কম থাকায় এই পেঁয়াজও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সেজন্য নিরুপায় হয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আরিফ উদ্দিন রাসেল সকালে বসুন্ধরা কাঁচা বাজারে বাজার করতে আসেন। পেঁয়াজের দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আমরা রীতিমত ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। সরকার বাজার মনিটরিংও করছে না। এভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকলে তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে সরকারের কাছে অনুরোধও করেন এর একটা বিহীত করতে।
এদিকে নতুনবাজার কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজের দোকানগুলোতে পেঁয়াজের সংকট। এর কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ী আব্দুল হেকিম বলেন, কাওরানবাজারের পাইকারী মার্কেটে গতকাল রাতে পেঁয়াজ পেয়েছেন কম। দাম বেশি হওয়ায় খুব কম পেঁয়াজ তিনি কিনে এনেছেন। অপরদিকে ক্রেতাদের সঙ্গে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় অনেক সময় বাকবিতন্ডাও করতে হচ্ছে।
বাড্ডা কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পেঁয়াজের সংকট না থাকলেও দাম বেশি। তবে কেন দাম বেশি সে বিষয়ে কোনো ব্যবসায়ী কথা বলতে রাজি হননি। এখানকার মুদি দোকানদার আল-আমিন বলেন, ‘আমরা পাইকারদের কাছে জিম্মি। আমাদের কিছুই করার নেই। পাইকারি বাজার থেকে আমাদের এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। সেজন্যই ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় আমরা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’
বাড্ডার বাসিন্দা জসীম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে জানান, বুধবার এক কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনেছেন ১৪৫ টাকায়। শুক্রবার বাজারে এসে দেখেন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। সরকার কি কিছুই দেখে না। নাকি সরকারও ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।’
উল্লেখ্য, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে (জুলাই-জুন) দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ দশমিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন। আর আমদানি করা হয়েছে ১০ দশমিক ৯২ লাখ মেট্রিক টন। ফলে মোট সরবারহের পরিমাণ ৩৪ দশমিক ২২ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে দেশে বাৎসরিক পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ২৪ লাখ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতের হিসেবে অনুযায়ী দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকার কথা নয়। বরং উদ্বৃত্ত থাকার কথা। তবুও বাজারে লাগামহীনভাবে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে।