স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে আসছে বড় পরিবর্তন
৫ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:১২
ঢাকা: দীর্ঘ সাত বছর পর হতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন। নেতৃত্বের সম্ভাব্য পালাবদলকে ঘিরে চলছে নানা রকম আলোচনা। তবে একটি বিষয় প্রায় চূড়ান্তই যে, আওয়ামী লীগের সহযোগী এই সংগঠনটির নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ক্যাসিনো ব্যবসা, দুর্নীতি, টেন্ডার ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত কেউই এবার কোনো পদ পাবেন না। যারা সৎ ও যোগ্য এবং রাজনীতিতে যাদের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমা রয়েছে দলের হাই কমান্ড তাদেরকেই নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন। এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্য থেকেও কাউকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওসারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছিল। মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটি এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এরই মধ্যে ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম এসেছে আবু কাওসারের। এ কারণে তাকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে নতুন নেতৃত্বের সন্ধান শুরু করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। ফলে সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে পারেন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ কেউ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নতুন সম্মেলন মানেই নতুন মুখ। প্রবীণ, তরুণ ও অভিজ্ঞদের সমন্বয় ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এখানে পরিবর্তন হবে, নতুন মুখ আসবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দলকে ঢেলে সাজানো হবে।’
এদিকে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেক নেতাকর্মী অভিযোগ করে সারাবাংলাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে। এছাড়া এতদিন কয়েকজন শীর্ষ নেতা টাকা নিয়ে আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের স্থান দিয়েছে। এতে ত্যাগী নেতাকর্মীরা কমিটির বাইরে থেকে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঠিক পদক্ষেপের কারণে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা এবার নেতৃত্বে আসতে পারে।
অপরদিকে, দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি দেখভাল করছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সম্মেলনে নেতৃত্ব কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আমরা শুধু যে যার মতো করে মতামত দেব। তবে যাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের নেতিবাচক কথা উঠেছে, সম্মেলনে তাদের প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। কিন্তু এটা বলতে পারি, এবার যোগ্য, সৎ, ক্লিন ইমেজ ও রাজনীতিতে দীর্ঘ পথ-পরিক্রমা যাদের রয়েছে তাদেরকেই নির্বাচিত করা হবে।’
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবকলীগ আমার প্রাণের সংগঠন। সংগঠনটিকে আরও গতিশীল করতে আমাদের নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছে। আমি মনে করি, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান একজন ত্যাগী, ন্যায়পরায়ণ, গতিশীল ও ক্লিন ইমেজ সম্পন্ন কাউকে সংগঠনটির নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচ্ছন্ন সংগঠন হিসেবে পরিচিত। রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের পথ চলায় আমরা সেই আস্থা অর্জন করেছি এবং এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখব। আমি মনে করি, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব এসে আমাদের এই পথচলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়া সংগঠনটির কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নতুন নেতৃত্ব এগিয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সাচ্চু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস দুঃসময়ে যারা দলের জন্য ত্যাগ করেছে এবং যারা ক্লিন ইমেজ সম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন। কোনো অপরাধী, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজ যেন সংগঠনের নেতৃত্বে আসতে না পারে সেটাই আমি চাই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা পরিশ্রমী, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সাথে জড়িত এবং যারা দুর্দিনে সংগঠনের পাশে ছিল তাদের মধ্য থেকেই প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন বলে আশা করি।’
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মো. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছে আমি সেটাকে স্বাগত জানাই। অভিযানের পর আমরা যে আভাস পেয়েছি, তাতে নতুন নেতৃত্ব আসবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের তৎকালীন সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটি হয়। পরে ২০০২ সালে প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ। আর সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওসারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল।