‘কললিস্ট বের করলেই জাবি ভিসির দুর্নীতি বের হয়ে আসবে’
৭ নভেম্বর ২০১৯ ২০:১৪
জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে— প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা গত ৮, ৯ ও ১০ আগস্টের কললিস্ট বের করতে বলেছেন। সেখানেই সব প্রমাণ আছে বলে দাবি করেছেন তারা। উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচিও অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এর আগে, আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর মঙ্গলবার আবাসিক হল বন্ধ ও ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কনসার্ট করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের লঙ্ঘন। আর
তবে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কনসার্ট করাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান। তিনি বলেন, ‘উপাচার্য নিজে অসুস্থ। এছাড়া বাসায় বৃদ্ধ এবং শিশুরা আছে। ফলে সারাদিন বাসার সামনে স্লোগান ও মাইকের শব্দে সবার ক্ষতি হচ্ছে।’ উপাচার্যের বাসার সামনে কনসার্ট হলে পুলিশ বাধা দেবে কিনা জানতে চাইলে, তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আন্দোলনকারীদের অন্যতম মুখপাত্র ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্কসবাদী) সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ বলেন, ‘কনসার্ট বাদ দেওয়া হবে না। উপাচার্যের বাসার সামনে কনসার্ট করতে না পারলে আমার চৌরঙ্গী এলাকায় কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
‘ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে ব্যবস্থা’
এর আগে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকে একে একে ক্যাম্পাসে গিয়ে জড়ো হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কিছুসময় অবস্থান করে। তারপর বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের দুর্নীতির তদন্তের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন শিক্ষকরা। তারা বলেন, ‘আমার যে অভিযোগ করছি তা তদন্ত করার দায়িত্ব সরকারের। আমরা তো গোয়েন্দা সংস্থার লোক না।’ এই পরিস্থিতিতে সহিংসতাকে উসকে দিতে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে বলেও শংকা প্রকাশ করেন বক্তারা।
এসময় আন্দোলনকারীরা উপাচার্যকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার দাবি জানান। একইসাথে তদন্ত চলাকালে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
সমাবেশ নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘গতকাল শিক্ষা উপমন্ত্রী যে কথা বলেছেন সেই কথার সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি। উনি আমাদের অর্থাৎ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রমাণ সহকারে লিখিত অভিযোগ করতে বলেছেন। আমরা তো বিষয়টি প্রমাণ করতে আসেনি। তদন্ত করে এই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের।’
অন্যদিকে, উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ অভিযোগ করার কথা বলায় মুখ খুলেছে শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা। শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বক্তব্য স্পষ্ট করেছেন। শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামজা রহমান অন্তর বলেন, ‘জাবি শাখা ছাত্রলীগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসের সাথে খেলা করছে। আমরা বারবার বলে আসছি আর্থিক কেলেঙ্কারির সত্যতা রয়েছে। স্বয়ং উপাচার্য, তার স্বামী, ছেলে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত।’ এছাড়াও অভিযুক্তদের ৮, ৯ ও ১০ আগস্টের কল লিস্ট চেক করলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে দাবি করেন এই নেতা।
এর আগে, শাখা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সামনে একাধিক বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ভাগাভাগির স্বীকারোক্তি দেন। একাধিক স্বীকারোক্তিতে তিনিও ওই আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে উপাচার্য, তার স্বামী ও সন্তানের সংশ্লিষ্টতার কথা দাবি করেন। এছাড়া শাখা ছাত্রলীগের কোন নেতা কত টাকা ভাগ পেয়েছেন তাও স্পষ্ট বক্তব্যে সাংবাদিকদের জানান তিনি।