কাউকে বলে কাজ হয়নি, তাই এলাকাবাসীর উদ্যোগেই ব্রিজ
৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:৩০
লক্ষ্মীপুর: স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে প্রায় ছয় শ ফুট লম্বা একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করেছেন লক্ষ্মীপুরের দক্ষিণ চরফলকন এলাকাবাসী। জেলার খায়েরহাট-পাটারীরহাট সড়কের জারিরদোনা খালের ওপর প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয়ে এ ব্রিজটি নির্মাণের ফলে নানা ভোগান্তি থেকে গ্রামবাসীর মুক্তি মিলল।
এলাকাবাসী জানায়, এই ব্রিজ না থাকায় দীর্ঘ ছয় বছর ধরে পথচারীরা কাদাপানিতে ভিজে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাতায়াত করতেন। তারা ব্রিজ নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি সরকারি দফতর ও জনপ্রতিনিধির কাছে আবেদন করলেও এতদিনে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
তাই ‘নিউ তারুণ্য তরঙ্গ সংসদ’সহ ৪টি সংগঠনের সদস্যরা চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেখানে একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেন। সে অনুযায়ী এলাকাবাসীর সহযোগিতায় খুঁটি, কাঠ ও আনুসঙ্গিক জিনিসপত্রসহ নগদ অর্থ সংগ্রহ করে ৮ অক্টোবর কাঠের ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু করেন তারা। দীর্ঘ ২৮ দিনের স্বেচ্ছাশ্রমে বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এলাকাবাসী নিজেরাই আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিজটির উদ্বোধন করেন।
স্থানীয় স্টার ক্লাবের সহ-সভাপতি মাকছুদ আলম জানান, খুঁটি, গাছ, কাঠ ও নগদ অর্থসহ এলাকাবাসীর বিভিন্ন রকমের সহযোগিতায় এ কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। আন্তরিকতার সহিত এলাকার যুবকরা একত্রিত হয়ে কাজ করলে, আর তাতে এলাকাবাসী সহযোগিতা করলে অনেক বড় কাজও করা যায়; এটাই তার উদাহরণ।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আবুল হোসেন বলেন, ব্রিজটি নির্মাণে স্থানীয় যুবকরা যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ ব্রিজটি নির্মাণ হওয়ায় ছাত্রছাত্রীসহ এ এলাকার মানুষদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হলো।
স্থানীয় পাটারীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম নুরুল আমিন রাজু জানান, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের এ সমস্যাটি সমাধানের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু নানান সীমাবদ্ধতার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যে কারণে, স্থানীয়রা নিজেদের অর্থে এ কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করেন। এর মাধ্যমে ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট সাময়িকভাবে হলেও নিরসন হবে বলে জানান তিনি। সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আশস্ত করেন।
মাকছুদ আলম, দিদার হোসেন, সাহেদ আলী ও ইসমাইল হোসেনসহ ব্রিজ নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত যুবকরা অভিযোগ করে জানান, বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করেছেন। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সরকারি দফতরের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের কাছে তারা অনেক ধর্না দিয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় তারা নিজেরাই শ্রম ও অর্থ দিয়ে এ ব্রিজ নির্মাণে এগিয়ে আসেন। ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ ওই এলাকার হাজারো মানুষের চলাচলে সুবিধা হবে।