জাবি ভিসির অপসারণসহ তিন দাবি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের
৮ নভেম্বর ২০১৯ ২১:৪৫
ঢাকা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৩৬ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। একইসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে, পরিকল্পনায় অনেক গলদ ও অস্বচ্ছতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডটি শুরু করতে যাচ্ছিল।
এতে বলা হয়, প্রথম থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন, এই পরিকল্পনার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন। পরিকল্পনায় অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার যুক্তিসঙ্গত দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু উপাচার্য এবং তার বশংবদ প্রশাসন এই দাবিতে কর্ণপাত না করে তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেন। ৫০০ গাছ কেটে ফেলেন। যেখানে এ ধরনের বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ই-টেন্ডার করার নির্দেশনা রয়েছে, সেখানে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার করা হয়েছে এবং শিডিউল ছিনতাইয়ের ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই প্রকল্পের বিপুল অংকের অর্থ নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে উপাচার্য অথবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার তদন্তের উদ্যোগ আজও দেখা যায়নি। বরং ধর্মঘট চলাকালে সহকারী প্রক্টরের ওপর হামলার মিথ্যা অভিযোগে প্রশাসন অজ্ঞাতনামা ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের এই পর্যায়ে গতকাল ৫ নভেম্বর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবন অবরোধ কর্মসূচিতে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের এক পর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ছাত্রলীগের ক্যাডারবাহিনী সংঘবদ্ধভাবে সমবেত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।
গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, এতে অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক মীর্জা তাসলিমা, অধ্যাপক রায়হান রাইন, মারিয়াম ছন্দা, খন্দকার হাসান মাহমুদসহ অন্তত ৩০ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামলাতে না পেয়ে জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছিলাম, আহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যখন হাসপাতালে চিকিৎসারত তখন উপাচার্য সংবাদ সম্মেলনে এই হামলাকে ‘গণঅভ্যুথান’ হিসেবে বর্ণনা করেন। হামলা করার জন্য ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে অংশীজনেরা কোনো সুস্পষ্ট অভিযোগ আনলে তা আমলে নিতে হয়, তদন্ত করে দেখতে হয়। আর সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের বিধি ও আইন আছে। অভিযোগ প্রমাণ না হলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করা যায়।
আমরা মনে করি, অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও প্রতি তার বিরূপ মনোভাব এবং সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের ক্যাডার বাহিনীর ওপর নির্ভরতা আমাদের লজ্জিত করে। ইতোমধ্যে সপরিবারে তার দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে এবং তিনি যেভাবে জনগণের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেছেন, তাতে তিনি নৈতিকভাবেও বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনা করার কোনো যোগ্যতা অবশিষ্ট রাখেননি। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ এবং নিরাপত্তা দেওয়ার মতো যোগ্যতাও হারিয়েছেন তিনি।
এই অবস্থায় আমাদের দাবি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পদচ্যুত করে জনগণের করের টাকার বিপুল অপচয় এবং শিক্ষার ক্ষয়ক্ষতি বন্ধ করা হোক; শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থার আওতায় নেওয়া হোক এবং একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, গীতি আরা নাসরীন, সহকারী অধ্যাপক কাজলী সেহরীন ইসলাম, প্রভাষক মার্জিয়া রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অর্পিতা শামস মিজান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, সহকারী অধ্যাপক সাঈদ হাসিবুল হাসান চৌধুরী, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামাল চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা খানম, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মজিবুর রহমান, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আতাউর খান, সৌম্য সরকার ও কাজী অর্ক রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, আ-আল মামুন ও আব্দুল্লাহ বাকী, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার ও আর রাজী, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খাদিজা মিতু ও সাদাফ নূর, সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, খুলনা বিশ্বিবদ্যালয়ের এমসিজে ডিসিপ্লিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন অর রশিদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী ফরিদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সিউতি সবুর, যবিপ্রবি‘র অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, গোপালগঞ্জে বশেমুরবিপ্রবি’র ইটিই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুজ্জামান রাজীব।