‘স্বাধীনতা বালকের জন্য নয়, বিপথে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা বন্ধ’
৯ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:৩৮
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উস্কানি দিয়ে ও মুখরোচক কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিপথে নিলে তা মেনে নেওয়া হবে না। আর তাদের যদি এসব করতে হয় তাহলে নিজেদের অর্থ তাদেরকেই জোগান দিতে হবে। নইলে সরকার টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেবে। কথায় বলে- স্বাধীনতা ভালো, তবে তা বালকের জন্য নয়; এটাও মাথায় রাখতে হবে।
শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় শ্রমিক লীগের ত্রিবার্ষিক কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কড়া হুঁশিয়ারি দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থ সরকার দেবে। সবরকম উন্নয়ন সরকার করবে। সেটা নিতে খুব ভালো লাগবে। আর সরকার সেখানে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এটা কখনও হতে পারে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের বিপথে নিলে টাকার জোগান বন্ধ করে দেওয়া হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে আমাদের ছেলেমেয়েররা সবচেয়ে কম খরচে উচ্চ শিক্ষা পায়; পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত অল্প খরচে তা দেওয়া হয় না। সেখানে স্বায়ত্বশাসন আছে একথা সত্যি। কিন্তু টাকা দিচ্ছে কারা? টাকা তো সরকার দিচ্ছে। সরকারের দেওয়া টাকা ইউজিসিতে যায়। সেখান থেকে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে শিক্ষকরা বেতন-ভাতাসহ আরও যা কিছু আছে পাচ্ছেন।
‘একজন শিক্ষার্থী ইউনিভার্সিটিতে কয় টাকা খরচ করে? মাসে বড় জোর দেড়শ টাকা। কিন্তু এই টাকায় কি উচ্চ শিক্ষা হয়! যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, কত লাখ টাকা লাগে প্রতি সেমিস্টারে? আর আমাদের পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে কত লাগে? সে টাকা কে জোগান দেয়? জোগান দেয় সরকার।’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর জন্য এক সেমিস্টারে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়।আর ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেল কিংবা কারিগরিতে আরও বেশি। সব টাকা তো সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ডিসিপ্লিন থাকবে, উপযুক্ত শিক্ষা পাবে। এবং নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলবে।সেটাই আমরা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নাকি আমরা বুঝি না? যারা কথা বলছেন তারাই কেবল বোঝেন, আর বোঝেন যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন তারা। পড়াশোনা নষ্ট করে, সেখানে স্ট্রাইক করে, দিনের পর দিন কর্মঘণ্টা নষ্ট করবেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ব্যাহত করবেন, তারা বোঝেন আর বুঝব না আমরা। এটা তো হয় না।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই ধরণের বালকসুলভ কথাবার্তা না বলাই ভালো। বরং ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করুক। তাদের লেখাপড়া শিক্ষার সময় যেন নষ্ট না হয়। উপযুক্ত সময়ে তারা ভালো রেজাল্ট করবে এবং জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। সেটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগের সুরে বলেন, ‘আমি এইজন্য বললাম, ইদানিং দেখছি, কোন কথা নাই, বার্তা নাই, ব্যবস্থা নেওয়ার পরও কয়েকজন মিলে অহেতুক অভিযোগ তুলছে। আমাদের আইন আছে। কেউ যদি কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনে, আর সেটা যদি প্রমাণ না হয় তাহলে যে অভিযোগকারী ওই আইনে তার বিচার হয়। তার সাজাও হয়। এটা কিন্তু আইনে আছে। কাজেই যারা কথা বলছেন, তারা আইনগুলি ভালোভাবে দেখে নেবেন, সেটাই আমরা বলব। কারণ আমরাও তো ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ছিলাম, পড়াশোনা করেই আসছি। এটাও তাদের ভুলে গেলে চলবে না।’
এর আগে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কার্যকরী সভাপতি শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান। এরপর সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন শেখ হাসিনা। মঞ্চের আরেক পাশে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা নিজ নিজ জেলার সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ। সভা পরিচালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানসহ তিনজন বিদেশি অতিথি।