তলিয়ে গেছে শত বিঘা জমি, যতদূর চোখ যায় গাছপালা-ঘর-বাড়ি তছনছ
১০ নভেম্বর ২০১৯ ১২:০৪
সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলায় তলিয়ে গেছে শত বিঘা ফসলি জমি। বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ভেঙে পড়েছে শতাধিক বাড়ি-ঘর, গাছপালা।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকালে গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুসুদুল আলম সারাবাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রাত ৩টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বাতাসের গতি প্রবল ছিল। বেলা বাড়লে বাতাসের গতি কমে আসে। আমার এলাকায় অন্তত ৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে। উপকূলের কাছে শত শত বিঘা ফসলি জমি, মাছের ঘের তলিয়ে গেছে বলে খবর পাচ্ছি। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধগুলো।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৬ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে গত রাতে মাত্র ১ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসেন।
সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, ইতোমধ্যে ২২ হাজার স্বোচ্ছাসেবক, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, নৌবাহিনীর সদস্য ও ১০০ জন সেনা সদস্য উপকূলীয় এলাকায় জানমাল রক্ষার কাজ শুরু করছেন।
তিনি আরও জানান, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় ঘর-বাড়ি, মাছের ঘের, ফসলি জমি, রাস্তঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব অঞ্চলে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ মণ্ডল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে আমার ইউনিয়ন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। প্রচণ্ড বাতাসে অধিকাংশ গাছ উপড়ে গেছে। কাঁচাঘর সব নষ্ট হয়ে গেছে। চিংড়ি ঘের, ধানের জমি পানিতে একাকার হয়ে গেছে। নদীতে পানি বাড়ছে। আমার এলাকার কিছু বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে সেগুলো মেরামতের চেষ্টা করছি। এখন জোয়ার চলছে, যে কারণে সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুজ্জামান বলেন, গাছ ভেঙে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও সেনাবাহিনী কাজ করছে। যাতায়ত ব্যবস্থা ভালো হওয়া মাত্র আমরা উদ্ধার কাজ শুরু করব।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া দফতরের উপপরিচালক জুলফিকার আলী জানান, রাত ৩টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮১ কিলোমিটার। সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ১৪৭ মি.লি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফেরার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আবুল কালাম (৬০) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন বলে জানা গেছে। তার বাড়ি শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামে। এছাড়া ভেটখালী ইউনিয়নের তারাণীপুরে দেয়াল চাপা পড়ে ভ্যানচালক পলাশ ও তার স্ত্রী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।