মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ না মানলে আদালতের নজরে আনার নির্দেশ
১১ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:১৯
ঢাকা: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দেওয়া সুপারিশ সরকার অমান্য করলে কমিশন আইন ও সংবিধান অনুসারে তা আদালতের নজরে আনার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্দেশনাসহ এ রায় দেন।
আদালতে মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি অব বাংলাদেশের করা রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
মানবাধিকার কমিশনের প্রতি কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
নির্দেশনাগুলো হলো- ‘মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে যে খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে সেই বিধিমালাটি সুশীল সমাজের পরামর্শ নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।’
‘এছাড়া কমিশনকে আইনের ১৬-ধারা অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ধারা অনুসারে কমিশন দেওয়ানি আদালতের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এবং তদন্ত বা অনুসন্ধানের স্বার্থে সাক্ষী ও নথি তলব অথবা জামিনযোগ্য পরোয়ানাও ইস্যু করতে পারে।’
‘যদি কমিশনের কোন সুপারিশ সরকার অমান্য করে তাহলে সংশ্লিষ্ট কমিশন আইনের ১৯-ধারা এবং সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টের নজরে আনতে হবে।’
‘কমিশন থেকে যেসব আদেশ দেওয়া হয় সেসব আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি ৩০ দিনের মধ্যে ইস্যু করতে বলা হয়েছে। এমন মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে তাদের পদ্ধতিগুলো নির্ধারণ করে নিতে হবে।’
‘কমিশনে কোনো অভিযোগ আসার পর তা যেন একজন ব্যক্তির স্বাক্ষরে নিষ্পত্তি বা আদেশ দেওয়া না হয়। কমিশন আইনের ১১(৩) বা ২৮-ধারার নিয়ম অনুসারে যথাযথ ক্ষমতা প্রয়োগ করে আদেশ প্রদানকারীদের নাম ও পরিচয় লিখতে হবে।’
‘খাদিজার বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনকে ৬০ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময়ে খাদিজা ও পরিবারের বক্তব্য শুনে তার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে কমিশনের ১৯-ধারা অনুসারে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে সুপারিশ করতে হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে রাজধানীর মিরপুরে গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর পাঁচ বছর কেটে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এ বছরের ৯ জানুয়ারি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এছাড়াও গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনায় কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা জানাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মামলাটির রুলের ওপর শুনানি শেষে এ নির্দেশনাসহ রায় দিলেন হাইকোর্ট।