‘চিকিৎসা তো পাচ্ছি, বিচার কী পাবো?’
১৬ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২৫
ঢাকা: ট্রেনে ওঠার একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়ি। ‘ঝ’ বগিতে ছিলাম। একটা বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। সবাই আল্লাহরে ডাকছিল। মনে হলো আমার শরীর কিছু একটাতে আটকে আছে। এরপরেই আমাকে টেনে বের করা হলো সেখান থেকে। তারপর থেকেই হাসপাতালে। এখানে চিকিৎসা তো পাচ্ছি কিন্তু বিচার কী পাবো?’
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সারাবাংলার সঙ্গে এভাবেই কথা বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মন্দবাগ রেলস্টেশনে দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের একজন আবুল কালাম।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১৩ জন বর্তমানে চিকিৎসাধীন রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর)। তাদের মাঝে আবুল কালামের অবস্থাই একটু গুরুতর বলে জানাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। দুইবার অস্ত্রোপচার করা হলেও খুব দ্রুতই তার অবস্থা স্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের তৃতীয় তলায় একটি ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে আবুল কালাম সারাবাংলাকে জানান তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। বাড়ি হবিগঞ্জে। সেখানেই তিনি ব্যবসা করেন। ব্যবসার কাজেই যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম। সঙ্গে ছিলেন আত্মীয় হাসান আলী। তিনি চট্টগ্রামেই থাকেন বলে জানালেন আবুল কালাম।
তিনি বলেন, ব্যবসায়িক কাজে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম। একটা বিকট শব্দে ঘুম ভাঙ্গার পরে শুনি সবাই বলছে ‘আল্লাহ বাঁচাও’। মনে হলো আমার শরীর কিছু একটার সঙ্গে আটকে আছে। এরপরে দেখলাম লোকজন এসে আমাকে টেনে বের করছে। পুরো ট্রেনের প্রায় সবাই ঘুমাচ্ছিল। সজাগ থাকলে হয়তোবা বাঁচার চেষ্টা করতে পারতাম। আমাদের বগির অনেকেই মারা গেছে, আহতও বেশি আমাদের বগির লোকজন।
তিনি আরও বলেন, সেখান থেকে উদ্ধার করে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর)। তার পর থেকেই এখানে চিকিৎসাধীন।
দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাসেবা পাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, এখানে ভালোই চিকিৎসা হচ্ছে। পায়ে অনেক ব্যাথা হয়, ঘুমাতে পারি না। ভেবেছিলাম আমার পা কেটে ফেলবে কিন্তু এখানে চিকিৎসকরা ভরসা দিচ্ছেন সেটা করা হবে না বলে। শুনেছি সরকার দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা বিনামূল্যে করাচ্ছে। রেলমন্ত্রীও দেখতে এসেছিল এখানে। উনাকেও বলেছি, ‘চিকিৎসা তো পাচ্ছি, বিচার কী পাবো?’ সবাই বলে ট্রেন জার্নি হলো নিরাপদ। কিন্তু তাহলে কাদের ভুলে এতো বড় শাস্তি পেলাম আমরা।
এ সময় তিনি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে বলেন, এমন দুর্ঘটনা যেনো আর কারো সঙ্গে না ঘটে।
পাশেই বসে নীরবে স্বামীর সেবায় ব্যস্ত আবুল কালামের সহধর্মিণী। ঘটনার পরেই তিনি খবর পান স্বামীর ফোনকলে। নীরবে চোখের জল ফেলে মনকে সান্তনা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে প্রাণে বাচাইয়া রেখেছে আমার স্বামীকে। উনার পা নাড়াতে কষ্ট হয়। ব্যাথায় কান্না করে উঠেন।
চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনিও বলেন, চিকিৎসা নিয়ে কোনো অভিযোগ নাই কিন্তু যারা এমন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী তারা কী শাস্তি পাবে?
এ দিকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের (পঙ্গু হাসপাতাল) অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ১৩ জন বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এদের মধ্যে ৫২ বছর বয়সী আবুল কালামের শারীরিক অবস্থা কিছুটা গুরুতর হলেও আশা করছি তিনিও খুব দ্রুতই স্থিতিশীল অবস্থায় চলে আসবেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ভোর পৌনে ৪টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের সাথে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় সর্বশেষ ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক।