সৌদি আরবে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে স্মারকলিপি
১৭ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:১৭
ঢাকা: সৌদি আরবে নারী গৃহশ্রমিকদের দুঃসহ জীবন ও লাশ হয়ে তাদের দেশে ফেরার ঘটনা দেশবাসীকে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন করেছে বলে জানিয়েছে দেশের প্রগতিশীল নারী সংগঠনগুলো।
রোববার (১৭ নভেম্বর) সৌদি আরবে নারী শ্রমিক নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা বন্ধ ও প্রবাসী নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে সংগঠনগুলো একথা জানায়।
সমাবেশে বক্তরা বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাড়ে আট মাসে ৮৫০ জন নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রত্যেকেই শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার। দেশে ফেরা নারী শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সৌদি আরবে ৩০ থেকে ৪০ সদস্যের এক একটি পরিবার। ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করতে হয়, গভীর রাতেও কাজ শেষ হয় না। ঘরে পর্যাপ্ত খাবার থাকার পরও গৃহশ্রমিকদের খেতে দেয় না। কথায় কথায় মারধর করে। অনেক সময় বেঁধে রেখে মারধর করে। যে বাসায় সে কাজ করে ওই বাসার সব পুরুষই যৌন নিপীড়ন করে। এমনকি ৯-১১ বছরের ছেলেও যৌন নিপীড়ন করে। সৌদি আরবে গৃহশ্রমিককে দাসী মনে করে। গৃহশ্রমিককে অত্যাচার করা যায়, ধর্ষণ করা যায়, এমনকি হত্যাও করা যায়।
বক্তারা আরও বলেন, নির্যাতনের অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন সৌদি আরবে গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিলে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব। এরপর থেকে গত জুলাই মাস পর্যন্ত ৩ লাখ নারী কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। দুই বছরের চুক্তিতে যাওয়া নারী শ্রমিকরা মাসে বেতন পান বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১৭ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী গৃহকর্মীদের বিনা খরচে সৌদি আরব যাওয়ার কথা; কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা লেগে যায় সৌদি আরব যেতে। ওখানে গিয়ে যে কাজ পাওয়ার কথা অনেক সময় তাকে সে কাজ দেওয়া হয় না।
সমাবেশে সিপিবি নারী সেল, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, শ্রমজীবী নারী মৈত্রী, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, নারী সংহতি, বিপ্লবী নারী ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন অংশগ্রহন করে।
সিপিবি নারী সেলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক লক্ষ্মী চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে এবং সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, নারী সংহতির কেন্দ্রীয় নেত্রী সুলেখা রহমান, বিপ্লবী নারী ফোরামের আহ্বায়ক আমেনা আক্তার, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী নীতি চাকমা। সমাবেশ শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপিও পেশ করেন তারা।