মর্যাদা নিয়ে চলব, মাথা নিচু করে না: প্রধানমন্ত্রী
২৩ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:৫৮
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কারও কাছে মাথা নত করে চলব না। মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলব। কারো কাছে ধার করে ঘি খাবো না। নিজেদের নূন ভাত খাব তাও ভাল কিন্তু নিজেদের অর্থায়নে নিজেরা চলব, মর্যাদা নিয়ে চলব। মাথা উঁচু করে চলব। মাথা নিচু করে না।
শনিবার (২৩নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৭ম জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে আমাদের যুবসমাজ উন্নত হবে, সমৃদ্ধশালী হবে উল্লেখ করে যুবলীগের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যুবলীগ রাজনৈতিকভাবে এ দেশের যখন সেই ১৯৭২ সালে শেখ ফজুলল হক মনি গড়ে তোলে তখন থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা অনেক অবদান রেখেছে। এমনকি আমরা যখন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছি তখনও যুবলীগ ভূমিকা রেখেছে।’
এক্ষেত্রে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নূর হোসেনসহ সকল শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকটা আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের যুবলীগের কর্মীদের অবদান রয়েছে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যুবলীগ অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। কাজেই এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এই যুবকরাই তো জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্ত্র তুলে নিয়ে নিজের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। কাজেই সেই যুব সমাজকে আমরা চাই, একটা আদর্শ হিসেবে তারা নিজেদের গড়ে তুলবে এবং এই যুবলীগ সংগঠনটা তাদের যেন কোনো রকম বদনাম না হয়। তারা যেন সম্মান নিয়ে চলতে পারে এবং আদর্শ নিয়ে চলে। তারা যেন দেশের কল্যাণে কাজ করে। এ দিকেই লক্ষ্য রেখেই সংগঠনটা গড়ে তুলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ। আর একটা কথা মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই সংগঠনটা হয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে। কোনো ক্ষমতা আগে দখল করে উড়ে এসে জুড়ে বসে, তারপর ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে এ সংগঠন গড়ে ওঠেনি। এ সংগঠন গড়ে উঠেছে নির্যাতিত মানুষ শোষিত মানুষ, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করার লক্ষ্য নিয়ে। সেই সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি সহযোগী সংগঠনও সেইভাবে গড়ে উঠেছে, এদেশের মানুষের কল্যাণ বাস্তবায়ন করার জন্য। এদেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য। স্বাধীনতার সুফল প্রতি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আর সেই আদর্শ থেকে যদি কখনো কেউ বিচ্যুত হয়ে যায়, তাহলে সে দেশকে কিছু দিতে পারে না।’
কারণ আমরা ১৯৭৫’র ১৫ আগস্টের পরে যারা এসেছে ক্ষমতায়, তারা তো মানুষের কল্যাণে কিছু করতে পারেনি দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কেন পারলাম! আমরা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেছি দেখেই পেরেছি। মাত্র দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের যে পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের ওপর অনেক বদনাম দিতে চেয়েছিল। এক পদ্মা সেতু নিয়ে যখন অভিযোগ এনেছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম যে নিজের অর্থায়নে আমরা পদ্মাসেতু করব।
‘আজকে আমরা তা প্রমাণ করেছি, নিজস্ব অর্থায়নেও আমরা করতে পারি। এখানে আমি বলব, সততা সত্যিই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। যেভাবে তারা এবং আমার দেশের কিছু লোক। আমাদের দেশেরই কিছু স্বনামধন্য। যাদের একসময় ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়ে ফুলে ফেঁপে ওঠতে আমরাই সাহায্য করেছি। কিন্তু সেই সময় একেবারে আন্তর্জাতিক সম্মাননা-টম্মাননা নিয়ে এলো এবং দেখা গেল একটা ব্যাংকের এমডির পদ ছাড়তে পারে না। এদিকে নোবেল প্রাইজ পায় অথচ একটা ব্যাংকের এমডির পদ ছাড়ে না। এমডির পদ তো একটা সরকারি বেতন নেওয়া। সেই পদ কেন বয়সের কারণে ছাড়তে হলো, সেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পদ্মা সেতু বন্ধ করার জন্য সেই আমেরিকার গিয়ে ধর্ণা দিল। এবং তারা আমাদের ওপর দোষ দিল দুর্নীতির।’
‘আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম এবং সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রমাণ করতে পারেনি। তারা বহু চেষ্টা করেছে। তারা যখন খুঁজতে গেছে তখন ওই খালেদা জিয়ারটাই বের হয়েছে, তারেকের টাই বের হয়েছে, কোকোর টাই বের হয়েছে। আরও অনেকেরটি বের হয়েছে কিন্তু তারা আমাদের কোনো দোষ খুঁজে পায়নি বা আমার পরিবারের কারও পায়নি। বরং আমরা যে কথা বলেছিলাম, নিজস্ব অর্থায়নে আমরা করে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ জাতির পিতা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কারও কাছে মাথা নত করে চলব না। মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলব। কারো কাছে ধার করে ঘি খাবো না। নিজেদের নূন ভাত খাব তাও ভালো কিন্তু নিজেদের অর্থায়নে নিজেরা চলব, মর্যাদা নিয়ে চলব। মাথা উঁচু করে চলব। মাথা নিচু করে না। এই কথাটি আমাদের মনে রাখতে হবে।
কাজেই আওয়ামী লীগ বা জাতির পিতার আদর্শ যারা বিশ্বাস করে তাদেরকে এইভাবেই চিন্তা করতে হবে, আমরা দেশের জন্য কতটুকু করতে পারলাম। দেশের উন্নয়ন কতটুকু করতে পারলাম। দেশের কল্যাণে কতটুকু কাজ করতে পারলাম। সেই চিন্তা নিয়েই সবাইকে কাজ করতে হবে—বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ লক্ষ্যে জাতির পিতার জীবনীর ওপর আত্মজীবনী থেকে শুরু করে তার জীবনীর ওপর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো পড়ার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে একটি দেশ সৃষ্টি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, ভোগে নয়, ত্যাগেই সুখ। কতটুকু পেলাম তা নয়, কতটুকু কাজ করতে পারলাম, সেটা ভাবতে হবে। এই চিন্তা মাথায় রেখে যারা রাজনীতি করে, তারা সফল হবে। যারা দুর্নীতি করে জৌলুস করতে পারে, চাকচিক্য দেখাতে পারে, তারা কিন্তু সম্মান পায় না। দেশের মানুষের কাছে দুর্নীতিবাজরা মর্যাদা পায় না।’