হলি আর্টিজানে হামলা: ৮ আসামির বিরুদ্ধে রায় পড়া শুরু
২৭ নভেম্বর ২০১৯ ১২:০৫
ঢাকা: বহুল আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে রায় পড়তে শুরু করেছেন আদালত। আসামিদের সবাইকে আদালতে উপস্থিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান আদালতের এজলাসে উঠে এ রায় পড়তে শুরু করেন। হলি আর্টিজান হামলার তিন বছর চার মাস ২৬ দিন পর এই মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। আর চার্জশিট গ্রহণের পর এক বছরে ৫২ কার্যদিবসে প্রস্তুত হয়েছে রায়।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আসামিদের কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করা হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে তাদের ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। কার্যক্রম শুরু হলে দুপুর ১২টার দিকে তাদের আদালতের এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার আট আসামি হলেন— অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশিদ ও শরিফুল ইসলাম।
এই মামলার চার্জশিটে মোট ২১ জন আসামির নাম ছিল। এর মধ্যে হামলায় সশরীরে অংশ নেওয়া পাঁচ জন হামলার পর বিশেষ কমান্ডো টিমের অভিযানে মারা যান। পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মারা যান আরও আট জন। এই ১৩ জনকে মামলার চার্জশিটে অব্যাহতি দিয়ে বাকি আট জনকে আসামি করা হয়।
এদিকে, রায় ঘোষণাকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে গত রাত থেকেই। বিশেষ করে নিম্ন আদালত চত্বর ঢেকে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলের পর থেকেই এই এলাকায় জনচলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কড়াকড়ি আরও বেড়েছে।
চার্জশিট দাখিল থেকে রায় এক বছর চার মাসে
হলি আর্টিজানে হামলার পর প্রায় দুই বছর পর এই মামলার চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। চার মাস পর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর একবছর পর রায় প্রস্তুত হয়েছে। চার্জশিট দাখিল থেকে শুরু করে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে এক বছর চার মাস তিন দিন।
২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মামলাটির চার্জশিট ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম (সিএমএম) আদালতে দাখিল করেন। এরপর ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন। পরে ২৬ নভেম্বর আদালত আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
আলোচিত এই মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য নেন ট্রাইব্যুনাল। ৩০ অক্টোবর আত্মপক্ষ শুনানিতে আট আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। ৭ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শেষে আট আসামির সবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। পরে ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ঠিক করেন আদালত।
দেশের ইতিহাসের নৃশংসত সেই হামলা
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলে পড়ে জঙ্গিরা। হামলায় রেস্টুরেন্টে খেতে আসা ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি তিন নাগরিকসহ রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের মধ্যে দু’জন প্রাণ হারান। একই ঘটনায় জঙ্গিদের গ্রেনেডের আঘাতে রেস্তোরাঁর বাইরে মারা যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান।
ঘটনাস্থলে তাণ্ডব চালানোর পর রাতভর রেস্তোরাঁয় আসা বাকি অতিথি ও রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখে জঙ্গিরা। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর বিশেষ একটি কমান্ডো টিম পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এর মাধ্যমে অভিযানের সমাপ্তি ঘটে।
হামলার সাত দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। পাঁচ জঙ্গিসহ শেফ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী শেফ শাওনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে দীর্ঘদিন পরে থাকার পর বেওয়ারিশ ঘোষণা করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আরও পড়ুন-
নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা নিম্ন আদালত
‘পুলিশের সক্ষমতা বাড়ায় কোণঠাসা জঙ্গিরা’
৫২ কার্যদিবস শেষে হলি আর্টিজান মামলার রায়
যেভাবে রায়ের পর্যায়ে পৌঁছালো হলি আর্টিজান মামলা