দেশে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা
২৭ নভেম্বর ২০১৯ ২১:৩৮
ঢাকা: চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এটি বিতরণকৃত ঋণের বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এর আগে গত জুন পযন্ত সময়ে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ফলে সর্বশেষ তিন মাসে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা, মার্চ থেকে জুন থেকে পর্যন্ত সময়ে খেলাপি বেড়েছে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ তিন মাসে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পযন্ত সময়ে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। উল্লেখ্য গত ডিসেম্বর খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, আর গত মার্চে ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। এটি হতাশার কথা।’ তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমার পরিবর্তে এভাবে বাড়তে থাকলে ব্যাংকিং খাত আরও চাপে পড়বে। যে কোনো মূল্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করতে হবে। তার করা না গেলে ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।’
অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাংকার সারাবাঙলাকে বলেন, সাধারণত বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ এবং মার্চ থেকে জুন এই সময়ে খেলাপি ঋণ কিছুটা বাড়ে। এবার বাড়ল তৃতীয় প্রান্তিকেও। এর কারণ ডিসেম্বরে বছর শেষের হিসাব হয় বিধায় ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিল বাড়িয়ে দেয়। ঋণ আদায়েও বাড়তি চেষ্টা থাকে। এর বাইরে অন্য কারণও রয়েছে। যেমন- এ বছর ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এ কারণে মোট খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের তিন মাসে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। তবে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বাড়লেও তা প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় অনেক কম। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।অর্থ্যৎ চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা।এর মধ্যে বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিতরণকৃত ঋণের খেলাপির পরিমাণ ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর তৃতীয় প্রান্তিকে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। তিন মাসের ব্যবধানে ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বেড়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণ ৫৪ হাজার ৫৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। যা এসব ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক শূন্য ৪৩ শতাংশ। গত জুন শেষে বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা, যা ওই সময়ে তাদের বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯২২ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিকে এসব ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সে হিসেবে গত মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।
অন্যদিকে সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯১ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ১ শতাংশ। গত জুন শেষে এসব ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি ৬২ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের (কৃষি ও রাকাব) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৭০০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, গত জুন শেষে যা ছিল ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ব্যাংক দুটির বিতরণ করা ঋণের ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ খেলাপি।
উল্লেখ্য খেলাপি ঋণ কমাতে অর্থমন্ত্রী নানা উদ্যোগ নিলেও তা কোন কাজে আসেনি। বরং দিনদিন বাড়ছে। গত ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং বিষয়ে নতুন নীতিমালা জারি করে। এতে খেলাপি হওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৬ মে তারিখে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে।এর মাধ্যমে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে (এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ) পরিশোধের সুবিধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এইসব সুবিধা দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ কমার পরিবর্তে দিনদিন বাড়ছে।