Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগামী সপ্তাহের শেষে কমতে পারে পেঁয়াজের দাম


২৮ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:০৪

ঢাকা: আগামী সপ্তাহের শেষে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ ওঠার প্রভাবও শিগগিরই বাজারে পড়তে শুরু করবে বলে ধারণা করছেন তারা। তবে পেঁয়াজের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসতে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার প্রতিদিনই ওঠা-নামা করছে। ভারত রফতানি বন্ধ করে দিলে দফায় দফায় বেড়ে পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় উঠেছিল। পরে তা কমে ২০০ টাকার নিচে নেমে এসেছিল। কিন্তু হঠাৎই তা আবার বাড়তে থাকে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২১৫ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকার ঘরে। সরকারের নানা পদক্ষেপেও কমছে না পেঁয়াজের ঝাঁজ।

বিজ্ঞাপন

                                                                    পেঁয়াজের দাম এখনও ঊর্ধ্বমুখী

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাকিস্তানি ১৮০ টাকা, চীনা ১৪০ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। দেশি পেঁয়াজের দাম পাইকারি বাজারে ২০০ টাকায় স্থির থাকলেও অন্য সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ সরকারের কোন পদক্ষেপের প্রভাবই বাজারে পড়েনি।

দাম না কমার পেছনের কারণ হিসেবে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কম থাকার কারণেই বাজারে পেঁয়াজের দামের এই ঊর্ধ্বগতি। যে পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। সরকার সংশ্লিষ্টদের অনেকেই এই তথ্যকে সত্য বলে মনে করছেন। তবে বাজার বিশ্লেষকদের একটি পক্ষ বলছেন, আড়তদারদের কারসাজিতেই পেঁয়াজের দাম এতটা বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

পেঁয়াজের আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন পেঁয়াজের যে চাহিদা- তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে বর্তমানে সেই পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে না। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক কম। আবার আমদানিকারকরাও তেমনভাবে পেঁয়াজ আমদানি করছে না। টিসিবি বা সরকার যদি সরাসরি পেঁয়াজ আমদানি করতো তাহলে হয়তো সংকট কিছুটা দূর হতো। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

দাম কেন কমবে জানতে চাইলে এই আমদানিকারক বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে দেশে উৎপাদিত নতুন যে পেঁয়াজ আসছে তা চাহিদার তুলনায় মাত্র ২ শতাংশ। দশ দিনে পরে তা ২০ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত হবে। আবার ১০ দিন পর পাকিস্তান ও মিশর থেকেও পেঁয়াজের আমদানি ২০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে। সার্বিক বিবেচনায় ১০ দিন পর পেয়াঁজের দাম কমতে শুরু করবে।’

শ্যামবাজারের পেঁয়াজের আমদানিকারক হাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ উঠতে থাকায় এখন পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে নতুন পেঁয়াজ ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে। বিদেশ থেকেও প্রচুর পেঁয়াজ আসছে। ফলে ধারণা করা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’

নতুন করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাঝে বাজারে পেঁয়াজ ছিল না, মিয়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আসছিল না। তাই পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল। এখন আবার কমতে শুরু করেছে।’

পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. মাজেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম আগের মতোই রয়েছে। নতুন পেঁয়াজ ওঠার প্রভাব বাজারে এখনও পড়েনি। যেসব অঞ্চলে নতুন পেঁয়াজ উঠছে, তা তাদেরই লেগে যাচ্ছে। সরকারি হিসাব মতে দৈনিক ৬ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে, সেখানে ৮০০ থেকে ১ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ হচ্ছে। পেয়াঁজ না থাকার কারণেই বাজারে এই ঊর্ধ্বগতি।’

সাবেক বাণিজ্য সচিব ও প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূলত সাপ্লাই চেইনে ঘাটতির কারণেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এখন পেঁয়াজের শেষ মৌসুম চলছে। কারও কাছে দেশি পেঁয়াজ তেমন নেই। ভারত রফতানি বন্ধ করার পর দেশে তেমনভাবে পেঁয়াজের আমদানিও হয়নি। দৈনিক ৬ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে, সেখানে যৎসামান্যই আমদানি হয়েছে। ধারণা করা যায় বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার কমতে শুরু করবে।’

কারওয়ান বাজারের একাধিক পাইকারি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে আড়তেই। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে রাজধানীর শ্যামবাজারসহ চট্টগ্রাম, বেনাপোল ও কক্সবাজারের কিছু ব্যবসায়ী জড়িত। আর দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে রয়েছেন ফরিদপুর ও পাবনার ব্যবসায়ীরা। মূলত পেঁয়াজের দাম উৎপাদনস্থল বা আমদানি করা স্থানেই বেড়েছে।’

নতুন পেঁয়াজ সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চন্ডী দাস কুন্ডু সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশে এবার পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ হেক্টর। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। ফরিদপুর, মাগুরা, মুন্সিগঞ্জ ও রাজবাড়ীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। তবে পেঁয়াজের মূল মৌসুম ফেব্রুয়ারি-মার্চ। অর্থাৎ এখনও সেই অর্থে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করেনি।’

এদিকে পেঁয়াজের ৪৭ জন আমাদিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, গত তিন মাসের কিছু বেশি সময়ে ৪৭টি প্রতিষ্ঠান ১ লাখ ৪ হাজার ৫৫৮ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে। এসব পেয়াঁজ আমদানিতে তাদের খরচ হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে ৩৮ টাকার মতো খরচ হয়েছে। তবে আমদানিকাররা প্রকৃত খরচ সম্পর্কে তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তাদের (আমদানিকারক) কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। তাদের সরবরাহ বৃদ্ধি করার কথা বলেছি। আমদানি করার পর যাতে মজুদ না করা হয় সে নির্দেশনাও দিয়েছি। আড়তদাররাও যাতে মজুত করতে না পারে সে কথা বলেছি।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আর কাউকে ডাকা হবে না। তারা নতুন করে এলসি খুলতে শুরু করেছে। আর কাস্টমসে যাতে কোনো হয়রানি না হয়, দ্রুত যাতে পেঁয়াজ খালাস দেওয়া হয় সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের।’

এদিকে বিভিন্ন গ্রুপ দেশে পেঁয়াজ আমদানি করছে। আগামী ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সিটি গ্রুপের আড়াই হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে চলে আসবে বলে জানিয়েছেন সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী। তবে কেজিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কতো পড়ছে সে তথ্য জানাতে পারেননি তিনি।

ন্যায্যমূল্যের পেঁয়াজ সম্পর্কে জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন গ্রুপের কাছ থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ কিনে নিচ্ছি। সেগুলো ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকায় ৫০টি স্থানে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি বিভাগেও খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। নির্ধারিত মূল্যের বেশি দাম নেওয়ার সুযোগ নেই, ৫০ টাকা নিয়ে থাকলে সেখানে এক কেজির বেশি পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে।’

দেশি পেঁয়াজ পেঁয়াজের দাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর