বিজ্ঞাপন

পেঁয়াজের দাম এখনও ঊর্ধ্বমুখী

November 28, 2019 | 5:34 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: খোলাবাজারে কয়েক দিন বিরতি দিয়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর শ্যামবাজার আড়ত, কারওয়ান বাজার ও নিউমার্কেটের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে খুচরা ব্যবসায়ীরা সর্বনিম্ন ১৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৬০ টাকা পর্যন্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।

বিজ্ঞাপন

বাজারে পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ২০০ টাকার মধ্যেই। তুরস্ক থেকে আসা আপেল সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। তবে তিনটি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়নি।

শ্যামবাজারে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশি পেঁয়াজ ২২০ টাকা কেজি দরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন তারা। এ ছাড়া ১২৫ টাকায় তুরস্ক, ১৬০ টাকায় পাকিস্তান এবং ১৯০ টাকা দরে মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে। শ্যামবাজারের পাইকার ব্যবসায়ীরা এখন আর ভারত থেকে পেঁয়াজ কিনে বিক্রি করছেন না।

এ বাজারের আড়তদার লালমোহন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তুরস্ক, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসছে ঠিকই। তবে সেটি চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এ কারণে পেঁয়াজের দাম আবার বাড়ছে। এখন আর কেউ মজুত করে বা কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে না। কারও কাছেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ নেই। নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

পাইকার সত্যানন্দ মজুমদার বলেন, ‘দেশীয় পেঁয়াজ কারও কাছে নেই। যা আছে তা শুকিয়ে গেছে। ঠাণ্ডা আরও বেশি পড়লে এ পেঁয়াজও চারাগাছ হয়ে যেত। তাছাড়া বাইরে থেকে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে তাতে বাজারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। চাহিদার তুলনায় ক্রেতা বেশি বলেই দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে।’

শ্যামবাজার আড়তে যেসব খুচরা ব্যবসায়ী পেঁয়াজ কিনতে এসেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাম নিয়ন্ত্রণে না আসায় তারা নিরুপায়। পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে কেনা পেঁয়াজ তাদেরকেও বেশি দামে বেচতে হয়। তাছাড়া বছর শেষের পেঁয়াজ হওয়ায় প্রতি ৫০ কেজি পেঁয়াজে ৫ কেজির মতো পেঁয়াজ পচা পাওয়া যায়। এ কারণে বাধ্য হয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

খুচরা ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের বস্তায় বেশি পরিমাণে পচা পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এক গাড়ি পেঁয়াজে কয়েক বস্তা পেঁয়াজ পচা হয়। এটা তো আমাদের ক্ষতি! এই ক্ষতি পোষাতে দামের সঙ্গে আপস করা যায় না। তাছাড়া পাইকাররা যে দাম সেটাও অনেক বেশি। নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত এ অবস্থার সমাধান হবে বলে মনে হয় না।’

বিজ্ঞাপন

কারওয়ান বাজারের কয়েকজন পাইকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনছেন তারা। দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে এসব পেঁয়াজের লক্ষণীয় কোনো পার্থক্য না থাকায় ক্রেতার আগ্রহও অনেক বেশি। বার্মা থেকে পেঁয়াজের বড় একটি চালান এ সপ্তাহেই কারওয়ানবাজার পৌঁছাবে। চালানটি পৌঁছালে পেঁয়াজের দাম সামান্য কমতে পারে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারক এম এ হাশেম জানিয়েছেন বার্মা থেকে বুধবার ১৩৯৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে পেঁয়াজের এ বিশাল চালানটি খালাস করা হয়েছে।

তিনি জানান, নভেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ বার্মা থেকে আমদানি হয়েছে। বার্মা থেকে আসা পেঁয়াজের আজকের চালানটি কারওয়ান বাজার পৌঁছলে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন এই আমদানিকারক।

নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়া প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকও পাইকারদের সঙ্গেই সুর মিলিয়েছেন। বুধবার একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘পেঁয়াজের চাহিদার তুলনায় আমদানি অপ্রতুল। এই কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।’

বিজ্ঞাপন

মজুতে ত্রুটি থাকায় পেঁয়াজের দাম কব্জায় আসছে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে উত্তোলনের সময় কৃষক মজুদ করতে পারেনি। এ কারণে বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি ছিল। সেটি প্রভাব বাজারে পড়েছে।’

এদিকে, খুচরা বাজারে পাতাসহ ছোট ছোট পেঁয়াজ বিক্রি করতে শুরু করেছেন রাজধানীর পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চল থেকে আসা কৃষকরা। তবে এই ছোট পেঁয়াজগুলো বেশি দামেই বিক্রি করছেন তারা।

নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাতার দাম ১৪০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহও দেখা গেছে বেশি। মাইমুনা ইনসান নামে এক ক্রেতা সারাবাংলাকে বলেন, বিদেশ থেকে আনা পেঁয়াজের তুলনায় দেশি ছোট পেঁয়াজগুলোর স্বাদ বেশি। এগুলো পাতাসহ বিক্রি করায় ক্রেতাদের লাভ। এ জন্য পাতাসহ পেঁয়াজ কিনছি।’

সারাবাংলা/টিএস/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন