Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধর্মঘটে বহির্নোঙ্গরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ও পরিবহনে অচলাবস্থা


৩০ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:৫৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নৌযান শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে পণ্য পরিবহন ও বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস কার্যক্রম। লাইটারেজ জাহাজগুলো পণ্য খালাসের জন্য না যাওয়ায় বহির্নোঙ্গরে অলস বসে আছে বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা ৭৮টি মাদার ভ্যাসেল। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে অলস বসে আছে এক হাজারেরও বেশি লাইটারেজ জাহাজ। এতে বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতির আশংকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বন্দরের ভেতরে জেটিতে কাজ স্বাভাবিক আছে। ইয়ার্ড থেকে কনটেইনার খালাস হচ্ছে। জাহাজে কনটেইনার ওঠানামা স্বাভাবিক আছে। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আউটারে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। খালাস তো বন্ধ করে দিয়েছে, পণ্য নিয়ে লাইটারেজগুলোও কোথাও যাচ্ছে না।’

গতকাল ১১ দফা দাবিতে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাত ১২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন। এরপর থেকে সারাদেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনকারী নৌ-পরিবহন চলাচল বন্ধ আছে।

এর আগে, একই দাবিতে গত ২৬ নভেম্বর ধর্মঘট শুরু করেছিল বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন নামে একটি সংগঠন। একদিনের মাথায় সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।

লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে যে ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল, সেটার সময় আউটারে আংশিক খালাসের কাজ হয়েছিল। যদিও পণ্য পরিবহন বন্ধ ছিল, কিন্তু একদিনের মধ্যে ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়ে যাওয়ায় সেটার প্রভাব খুব বেশি পড়েনি। কিন্তু এবার শ্রমিকদের বড় অংশ ধর্মঘট ডেকেছে। আগের ধর্মঘট আহ্বানকারীরাও শুনেছি আনঅফিসিয়ালি তাদের সঙ্গে মিলে গেছেন। এবার আউটারে পণ্য পরিবহন একেবারেই বন্ধ আছে। ধর্মঘট শুরুর আগ থেকে আউটারে লাইটারেজ জাহাজ যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের অধীন প্রায় ১ হাজার ২০০ লাইটারেজ জাহাজ বসে আছে। পণ্য নিয়ে কোনো জাহাজ চট্টগ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে না।’

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্যবাহী বড় জাহাজ আছে ৭৮টি। এর মধ্যে ৪৯টি জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে। বাকি ২৯টি জাহাজ পণ্য খালাসের শিডিউল নেওয়ার অপেক্ষায় আছে। কিন্ত শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৮টার পর থেকে কোনো লাইটারেজ জাহাজেই বর্হিনোঙ্গরে যায়নি। এমনকি আগে থেকে পণ্য খালাসে নিয়োজিত থাকা জাহাজগুলোও খালাস শেষ না করেই ঘাটে ফিরে এসেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের পাশ্ববর্তী কর্ণফুলী নদীল ১৬টি ঘাটে অলস বসে আছে শত শত লাইটারেজ জাহাজ ও অয়েল ট্যাংকার।

চট্টগ্রাম ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী শফিক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যারা জাহাজের মালিক আছি, আমরা তো খালাস করার জন্য প্রস্তুত আছি। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু শ্রমিকরা যদি জাহাজ না চালায়, আমরা কি করতে পারি? তবে মাদার ভ্যাসেলগুলো যদি পণ্য নিয়ে বসে থাকে তাদের তো ডেমারেজ গুণতে হবে। তাদের এজেন্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

উল্লেখ্য, দেশের ৭৫ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয় নৌপথে। মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য নিয়ে লাইটারেজ জাহাজগুলো ঘাটে এবং ঢাকা, খুলনা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, নরসিংদীসহ আরও কয়েকটি জেলার বিভিন্ন নদীবন্দরে পৌঁছে দিয়ে আসে। ধর্মঘটের কারণে সেই পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে বাজারে প্রভাব পড়বে। বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ধর্মঘটের কারণে প্রায় ৩ হাজার লাইটারেজ জাহাজ বসে আছে। আমরা বারবার আমাদের দাবির কথা বলে আসছি। কিন্তু আমাদের দাবির প্রতি কোনো ধরনের দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় আমরা ধর্মঘট ডাকতে বাধ্য হয়েছি।’

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের ঘোষিত ১১ দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারীদের খোরাকি ভাতা ফ্রি করতে হবে ও ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করতে হবে। মাস্টার ড্রাইভারশিপ পরীক্ষায় ও ডিপিডিসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সব অনিয়ম বন্ধ করতে হবে এবং কোর্স চলাকালে শ্রমিকদের ছুটি বাধ্যতামূলক করতে হবে। নৌ শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসালয় করতে হবে। নৌপথে মোবাইল কোর্টের নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নৌ শ্রমিকের মৃত্যু হলে ১২ লাখ টাকা মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভারতগামী শ্রমিকদের লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে ল্যান্ডিং পাস সার্ভিস ভিসা ও জাহাজের ফ্রিজিং ব্যবস্থা না থাকায় তাদের (শ্রমিকদের) সুবিধা মতো স্থানে বাজার ও অন্যান্য কাজের জন্য আলাদা নৌকার ব্যবস্থা করতে হবে।

নৌপথে পণ্য পরিবহন নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর