Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেতাদের ‘অন্ধকারে রেখে’ মাহতাবের সভা, আ.লীগে অসন্তোষ


২ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৩৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কার্যনির্বাহী কমিটির অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ্য ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ‘অন্ধকারে রেখে’ ভারপ্রাপ্ত সভাপতির বাসায় একটি মতবিনিময় সভা নিয়ে অস্বস্তি ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী কার্যনির্বাহী কমিটি ও তৃণমূলের কিছু নেতাকে তার বাসায় ‘ভাতের দাওয়াত’ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখেন, সেখানে ব্যানার লাগিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মাহতাব।

বিজ্ঞাপন

নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। সেই কমিটিতে সভাপতি পদ থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় প্রবীণ মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী এই সভা আহ্বান করেছিলেন। কেন্দ্রীয় সম্মেলনে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ দেখাতে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ্য নেতার পরামর্শে তিনি এই উদ্যোগ নেন বলে আলোচনা চলছে।

রোববার (১ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় পল্টন রোডে মাহতাবের বাসভবনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, যুগ্ম সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, নগরীর ১৬টি থানা ও ৪২টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক অথবা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দলীয় কাউন্সিলরেরা ছিলেন বলে মাহতাব নিজেই সারাবাংলাকে জানিয়েছেন।

নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কার্যনির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সহসভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা এই সভার বিষয়ে জানতেন না। এমনকি রোববার বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়, যাতে মাহতাব ও মেয়র নাছিরও ছিলেন। এ সভায়ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির বাসায় মতবিনিময়  সভা আয়োজনের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। দাওয়াতপ্রাপ্তদের কাছ থেকে শুনে সভার একপর্যায়ে একজন সহসভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসায় কোনো দাওয়াত আছে কি না জানতে চান। তখন মাহতাব নিশ্চুপ থাকেন। পরে আরেকজন নেতার অনুরোধে তিনি কার্যনির্বাহী কমিটির সবাইকে রাতে তার বাসায় ভাত খেতে বলেন। মাহতাবের এমন দাওয়াতে সভার মধ্যেই নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়, যার ফলে ৭১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাই যাননি।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘কার্যনির্বাহী কমিটির সভার আগে আমরা জানতামই না, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নগর কমিটি ও তৃণমূলের কাউকে কাউকে ভাতের দাওয়াত দিয়েছেন। এরপরও আমরা কয়েকজন সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, ব্যানার টানিয়ে মতবিনিময় সভা চলছে। বক্তব্য রাখেন মাহতাব ভাই ও নাছির ভাই। ভাতের দাওয়াত দিয়ে ফরমাল মতবিনিময় সভা করার বিষয়টি আমাদের কাছে ভালো লাগেনি। দুই ঘণ্টা আগে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়েছে। এই সভার বিষয় অবশ্যই কার্যনির্বাহী কমিটিতে উত্থাপন করা দরকার ছিল। সভা শেষ হওয়ার আগেই ভাত না খেয়ে আমরা চলে আসি।’

দলীয় নেতারা জানান, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির বাইরে যারা শুধুমাত্র মাহতাব ও মেয়র নাছিরের অনুসারী, তারাই মতবিনিময় সভার দাওয়াত আগে থেকে পেয়েছিলেন। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের মধ্যে দলীয় সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।

দাওয়াতপ্রাপ্তদের একজন নগর আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক ও কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাহতাব ভাই নিজে আমাকে টেলিফোন করে উনার বাসায় ভাত খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছিলেন। তবে আমি যেতে পারিনি।’

নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাহতাব ভাই অনেককে টেলিফোন করে বলেছেন, আবার কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে সবাইকে বলেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সবাইকে টেলিফোনে বলেছেন কি না? তিনি বলেছেন, যার যার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন, তাকে তিনি দাওয়াত করেছে। এটা নিয়ে কারও দোষ ধরা উচিত নয়। ভাত খেতে খেতে তিনি মতবিনিময় করেছেন। আগামীতে কেন্দ্রীয় সম্মেলন আছে, দেশে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে— এসব বিষয়ে তিনি সতর্ক থাকতে বলেছেন সবাইকে। আমি নিজেও গিয়েছিলাম। তিনি এবং মেয়র সাহেব বক্তব্য রেখেছেন। আমরা কোনো বক্তব্য দিইনি। মহিউদ্দিন ভাই (এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী) বেঁচে থাকতেও তো ভাতের দাওয়াত দিতেন, সেখানে সাংগঠনিক কথাবার্তা হতো।’

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নিয়ন্ত্রণে আছে সহসভাপতি খোরশেদ আলম ‍সুজনের। মতবিনিময় সভার কথা জানানো হয়নি তাকেও। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি।

খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাওয়াত দিয়ে উনার বাসায় ভাত খাওয়াতেই পারেন। কাকে কাকে দাওয়াত করবেন, সেটা সম্পূর্ণ উনার পছন্দের বিষয়। কিন্তু কার্যনির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাকে না জানিয়ে ভাত খাওয়ানোর নামে মতবিনিময় সভা কেন করা হলো? এত লুকোচুরি কেন? এই সভার বিষয়টি আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। সভায় কেউ কেউ নাকি বলেছেন, মাহতাব ভাইকে আমৃত্যু সভাপতি রাখবেন। গোপন সভা ডেকে এসব বক্তব্য কেন? সেজন্য আমরা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।’

সভায় উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মতবিনিময় সভায় নগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে কমিটির কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি দলীয় কর্মসূচি সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন। সঙ্গে সঙ্গে এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম। এ নিয়ে তর্কও হয়।

জানতে চাইলে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আমাদের সম্মেলন আছে। আমরা যেন একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে সুন্দরভাবে সম্মেলনে যেতে পারি, কোনো বিভেদ যেন না হয়, সেজন্য মতবিনিময় করেছি। পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে, গুজব ছড়িয়ে লবণের দাম বাড়ানো হচ্ছে, চারদিকে ষড়যন্ত্র চলছে— এ অবস্থায় যাতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারি, সে বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ সৌজন্য  অনুষ্ঠান। এখানে অন্য কিছু নেই।’

২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর প্রয়াত জহুর আহমদ চৌধুরীর ছেলে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।

‘গোপন সভা’ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ টপ নিউজ মতবিনিময় সভা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর