আজ ‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’
৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:৩০
দেশের শীর্ষস্থানীয় নাট্যদল ঢাকা পদাতিক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানী মাষ্টার দা সূর্যসেন-এর প্রহসনের বিচার ও অন্যায় হত্যাকাণ্ডের বিষয়বস্তুকে উপজীব্য করে মঞ্চে নিয়ে এসেছে নাটক ‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’। নাট্যজন মাসুম আজিজ-এর রচনা ও নির্দেশনায় এটি তাদের ৩৮তম প্রযোজনা।
ইতিহাস নির্ভর এ নাটকের চরিত্রগুলো সূর্যসেন, প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত, অম্বিকারায়, নির্মলসেন এবং ব্রিটিশ উকিল ও বাঙালি উকিলসহ প্রায় ৪০টি চরিত্র উঠে এসেছে এ নাটকে। যাতে অভিনয় করেছেন নাদের চৌধুরী, মাহবুবা হক কুমকুম, আব্দুল্লাহ রানা, হাসনা হেনা শিল্পী, মাহাবুবুর রহমান টনি, সাবিহা জামান, শ্যামল হাসান, আক্তার হোসেন ও দেবাশীষ বড়ুয়াসহ আরও অনেকে।
‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’ সম্পর্কে নাটকটির নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম আজিজ জানালেন তার অনুভূতি। বললেন, ‘ওদের পথ হয়তো ভুল ছিল, কৌশলে ত্রুটি ছিল, আবেগের বাড়াবাড়ি ছিল। তারপরও সব ছাপিয়ে মনে হয়— দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষের সমষ্টিগত স্বার্থের প্রয়োজনে নিজের ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি সব হেলায় বিসর্জন দেওয়ার কী এক মহাশক্তি আর অদ্ভুত ক্ষমতা ওরা অর্জন করেছিল। গুলির মুখে, ফাঁসির দড়িতে, পুলিশের লাঠির আঘাতে, গোয়েন্দা পুলিশ অফিসের গোপন কুঠুরীর নির্মম অত্যাচারে ওরা সময়ের আগেই বিদায় নিয়েছে এই সুন্দর পৃথিবী থেকে। সেই রক্তের, সেই আত্মত্যাগের সুচীশুভ্র পথ ধরে ক্রমাগত হাঁটতে হাঁটতে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা। ওদের কথা ভোলা যাবে না তো। সৎ মূল্যটুকু যে ওদের পাওনা।’
কেন এই নাটক সে প্রসঙ্গে বললেন, ‘ভাবনাটার শুরু এখান থেকে প্রায় বছর দু’য়েক আগে। আমার মনে হয়েছে, এত মৃত্যু, এত আত্মত্যাগ সবই কি এমনি এমনি? বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তিত সুরত, পুঁজিবাদের কদর্য রূপ, আমাদের বারবার নিয়ে যায় একটি বিশ্বাসের কাছে। আর তা হলো— সমাজতন্ত্রই মুক্তির একমাত্র পথ। জেলখানার কনডেম সেলে বসে মাষ্টারদা তাই তাঁর অর্ধসমাপ্ত আত্মজীবনীগ্রন্থ বিজয়া-তে এভাবেই লিখেছিলেন। লিখেছিলেন, সমাজতন্ত্রের পথই প্রকৃত পথ। আধো আধো সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন মানুষ হিসেবে আমি ইতিহাসের কাছে এক ধরনের দায়বদ্ধতাও অনুভব করেছি কাজটি শুরু করার যুক্তি হিসেবে।’
নাটকটির নির্মাণ প্রসঙ্গে জানালেন, ‘এ তো গেল ভাবনার প্রেক্ষিত। মঞ্চে কিভাবে আনব তা নিয়ে ছিল আমার দারুণ উৎকণ্ঠা। শেষমেষ ভেবে দেখলাম সহজ করে সহজ কায়দায় গল্পটা বলে যাই। আমার মনে হয় দর্শক বিশ্বাস করবেন। আর আমরা তো ইতিহাসকে আশ্রয় করেছি কেবল। প্রকৃত অর্থে ইতিহাস বর্ণনা করতে চাইনি। ইতিহাস এসেছে ব্যাখ্যার প্রয়োজনে। মাষ্টারদাকে আজকের সময়ের মুখোমুখি দাঁড় করানোটাই আমরা জরুরি ভেবেছি। দর্শকদের করেছি বিচারক। তারা বিচার করবেন গল্প আর এই প্রযোজনা।’
‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’ নাটকের মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনায় আমিনুর রহমান আজম, পোশাক পরিকল্পনা আইরিন পারভীন লোপা, আবহ সংগীতে আবুল বাশার সোহেল, প্রধান সমন্বয়কারী ও প্রযোজনা অধিকর্তা মিজানুর রহমান এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে গোলাম কুদ্দুছ।
‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’ নাটকটির ১৭তম প্রদর্শনী শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে।