Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিপলস লিজিংয়ের আর্থিক প্রতিবেদন আমলে নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক


৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:২৬

ঢাকা: পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএলি) দায় দেনা ও সম্পদের হিসাব আমলে নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে কোম্পানিটির প্রকৃত সম্পদ ও দায় দেনার পরিমাণ কত, তা জানতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ের আগে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে আশার কথা হলো পিপলস লিজিং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা প্রায় ৮ কোটি টাকা সম্প্রতি ফেরত পেয়েছে। আরো কিছু টাকা ফেরত আসার জন্য পাইপলাইনে রয়েছে বলেও জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও পিপলসের অবসায়ক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পিপলস লিজিংয়ের সম্প্রতি তাদের সর্বশেষ আয় ব্যয় ও সম্পদের হিসাব সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছে। কিন্তু এই প্রতিবেদন যাচাই বাছাই করে আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। ফলে প্রতিবেদনটি আমরা আমলে নিচ্ছি না। বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে পিপলস লিজিংয়ের সর্বশেষ চার বছরের (অর্থ্যাৎ ২০১৫ থেকে ২০১৯) আয় ব্যয় ও সম্পদের হিসাব নিরীক্ষা করছে একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। আশা করছি, আগামী ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যে নিরীক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। তখন কোম্পানির প্রকৃত সম্পদ ও দায় দেনার পরিমাণ জানা যাবে। এরপর টাকা আদায় সাপেক্ষে গ্রাহকদের মাঝে অনুপাতিকহারে বণ্টন করা হবে।

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলসের পাওনা কিছু টাকা ফেরত আসতে শুরু করেছে। নাভানা ও বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং নামে দুইটি প্রতিষ্ঠান এবং সাইফুল ইসলাম নামে একজন বড় গ্রাহকসহ বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কাছ থেকে আমরা ৮ কোটি টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পিপলসের দায়, দেনা পরিশোধ ও আদায়ের জন্য একটি অবসায়কের হিসাব খোলা হয়েছে। এই হিসাব থেকেই পরবর্তীতে সব লেনদেন করা হবে। কেউ টাকা জমা দিলে এই হিসাবে জমা হবে। আবার কেউ টাকা পাওনা থাকলে তাকেও এই হিসাব থেকে টাকা দেওয়া হবে। এর আগে গত ২১ জুলাই পিপলসের সম্পদের পরিমাণ, দেনার পরিমাণ এবং সম্পদ কোথায় কার কাছে রয়েছে তার বিস্তারিত জানতে চেয়ে পিপলসের ম্যানেজমেন্টের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। সেই আলোকে পিপলস কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদনটি নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিবেদনটি সন্তোষজনক না হওয়ায় তা আমলে নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।

পিপলস লিজিংয়ের আর্থিক অবস্থা: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যনুযায়ী, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পিপলস লিজিংয়ের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। আমানতের বিপরীতে সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। আমানতের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০০ কোটি টাকা হলো ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীর। এছাড়াও পিপলস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণ বাবদ পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী পিপলসের সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে কোম্পানিতে আমানতকারী পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। আমানত ও সম্পদের ব্যবধান ৬৯৮ কোটি টাকা।

পিপলসের কাছে পাওনা টাকা কারা আগে পাবেন: পিপলসের কাছে পাওনা টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে সবার আগে সরকারের ট্যাক্স বাবদ টাকা পাওনা থাকলে তা পরিশোধ করা হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানটির কর্মরতদের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে এবং দৈনিক মজুরির ভিত্তিকে কেউ থাকলে ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করা হবে।

পরবর্তীতে কোম্পানির আমানতকারীদের মধ্যে সবার আগে ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীর অর্থ পরিশোধ করা হবে। তারপর প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর পাওনা পরিশোধ করা হবে। তবে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা কিছু পাবেন না। এইক্ষেত্রে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কিংবা উদ্যোক্তা পরিচালক সবাই মালিক। তবে সবার টাকা পরিশোধ করার পর টাকা অবশিষ্ট থাকলে বিনিয়োগকারী ও শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন।

পিপলসের সম্পদ: পিপলস লিজিংয়ের অ্যাসেট বলতে রয়েছে রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে প্যারামাউন্ট হাইটসে মোট ১৪ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের ২টি ফ্লোর, কয়েকটি গাড়ি এবং নগদ ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পিপলসের সবচেয়ে বড় অ্যাসেট হলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ দেওয়া বাবদ পাওনা ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এই ঋণ তাদের মূল অ্যাসেট।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন পায়। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে ছিল। ২০১৯ সালের ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থমন্ত্রণালয়ে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের আবেদন করে। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরবর্তীতে গত ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়। আর গত ৪ সেপ্টেম্বর কোম্পানির দায় দেনা নিরীক্ষা করতে একনাবিন অর্ডিট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আর্থিক প্রতিবেদন পিপলস লিজিং বাংলাদেশ ব্যাংক

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর